শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৪ নতুন রোগী: বাড়ছে উদ্বেগ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৪ নতুন রোগী: বাড়ছে উদ্বেগ

সংগৃহীত

অন্যান্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মাঝে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯৪ জন নতুন রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে, যা ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতিশীল একটি চিত্র তুলে ধরছে।

 

আমাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৯৪ জন রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬১ জন রোগী বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। এই অঞ্চলের ডেঙ্গু পরিস্থিতির গুরুতরতা এতেই স্পষ্ট। এছাড়া, ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ৬৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) ৫৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৮ জন, খুলনা বিভাগে ৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই ডেটা-চালিত চিত্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তার এবং তার প্রভাবের একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেয়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বরিশাল বিভাগে নতুন করে সংক্রমণের উচ্চ হার স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

 

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৬ হাজার ৭৮৯ জন রোগী। এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুজনিত কারণে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ২৯ জন নারী। এই পরিসংখ্যান বিগত বছরের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মাত্রা নির্দেশ করে এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পূর্ববর্তী বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ বছর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা সরকারের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে

মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু মোকাবেলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন যে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঘর ও আঙিনার আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ করা এবং মশার লার্ভা ধ্বংসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। পাশাপাশি, অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং ডেঙ্গু পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকারি সংস্থাগুলো মশা নিধনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও, নাগরিক পর্যায়ে সচেতনতা ও সহযোগিতা ছাড়া এর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

 

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু এবং ৩৯৪ জন নতুন রোগীর হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা দেশের অন্যান্য স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপের ভয়াবহতাকে আবারও সামনে এনেছে। এটি কেবল একটি রোগ নয়, বরং এটি জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।