জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম
বিনোদন জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অর্থাভাবের কারণে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে পরলোকগমন করেছেন তেলুগু চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা ফিশ ভেঙ্কট। শুক্রবার (১৮ জুলাই) ভারতের হায়দ্রাবাদের আরবিএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৩ বছর। এই ঘটনা বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমার অঙ্গনে গভীর উদ্বেগ ও আলোচনা তৈরি করেছে।
আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফিশ ভেঙ্কট দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। ফিল্মফেয়ারের খবর অনুযায়ী, গত ৯ মাস ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সম্প্রতি তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেটরে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছিল। এই জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল প্রায় ৫০ লাখ রুপি, যা তার পরিবারের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। যদিও তেলুগু অভিনেতা বিশ্বক সেন ২ লাখ রুপি সহায়তা করেছিলেন, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুবই সামান্য। সূত্রের খবর, অর্থাভাবের কারণেই ফিশ ভেঙ্কট পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পাননি, যা তার অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, ফিশ ভেঙ্কটের আসল নাম অনেকেই জানতেন না। ২০০০ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগে তিনি মুশিরাবাদে মাছ বিক্রি করতেন, সেখান থেকেই তার নামের আগে ‘ফিশ’ শব্দটি যুক্ত হয়ে যায় এবং তিনি ‘ফিশ ভেঙ্কট’ নামেই পরিচিতি লাভ করেন। প্রায় ৮০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই গুণী শিল্পী। কৌতুক চরিত্রে তার সাবলীল অভিনয় দর্শকদের মন জয় করলেও, তিনি অনেক ছবিতে খল চরিত্রেও সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। তেলেঙ্গানার আঞ্চলিক উপভাষায় সংলাপ বলার তার অসাধারণ দক্ষতা তাকে অন্যান্য অভিনেতাদের থেকে বিশেষভাবে আলাদা করে তুলেছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া ‘কফি উইথ আ কিলার’ ছিল তার অভিনীত শেষ ছবি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ফিশ ভেঙ্কট তেলুগু সিনেমার একটি পরিচিত মুখ ছিলেন এবং তার উপস্থিতি ছবিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করত। তার অভিনীত জনপ্রিয় ছবিগুলোর তালিকায় রয়েছে—‘বান্নি’, ‘আদি’, ‘আধুরস’, ‘গাব্বর সিং’, ‘ডিজে তিল্লু’, ‘দিল’, ‘আত্তারিন্তিকি দারেদি’ এবং ‘নায়ক’। এসব ছবিতে তার চরিত্রগুলো দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তার মৃত্যু তেলুগু বিনোদন শিল্পে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাটি শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পীদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
ফিশ ভেঙ্কট স্ত্রী সুভর্ণা এবং কন্যা শ্রাবন্তীকে রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে তেলুগু সিনেমা জগতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই ঘটনাটি কেবল একজন অভিনেতার মৃত্যু নয়, এটি শিল্পের ভেতরের এক করুণ চিত্র তুলে ধরে, যেখানে জনপ্রিয় অভিনেতা হয়েও অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। বলিউডসহ অন্যান্য চলচ্চিত্র শিল্পে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবার নজর দেওয়া উচিত। ফিশ ভেঙ্কটের পরিবার ও নিকটজনদের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা।
আপনার মতামত লিখুন: