সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

এক মাস রোজ এক ঘণ্টা হাঁটলে শরীরে কী পরিবর্তন হবে, জানেন?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২০, ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম

এক মাস রোজ এক ঘণ্টা হাঁটলে শরীরে কী পরিবর্তন হবে, জানেন?

ছবি- সংগৃহীত

প্রতিদিন সকালে এক ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস আপনার শরীর ও মনে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। হজমশক্তি বৃদ্ধি, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক প্রশান্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমানো - এমন অনেক উপকারিতা পাবেন মাত্র এক মাসের নিয়মিত হাঁটার ফলে।

 

সুস্থ জীবনের জন্য শারীরিক কার্যকলাপ অপরিহার্য। আধুনিক জীবনে যান্ত্রিকতা এবং অলসতা আমাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। চিকিৎসকরা সবসময়ই সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটার ওপর জোর দিয়ে থাকেন। প্রতিদিনের রুটিনে মাত্র এক ঘণ্টা হাঁটার মতো একটি সহজ অভ্যাস আমাদের শরীর ও মনে অভাবনীয় পরিবর্তন আনতে পারে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ ও প্রাচ্য চিকিৎসাবিদ্যায় এই অভ্যাসটির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। মাত্র এক মাস নিয়মিত এই অভ্যাসটি অনুসরণ করলে আপনার শরীরে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে, চলুন জেনে নিই।

এক মাস রোজ এক ঘণ্টা হাঁটলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো আসবে:

প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানি পানের মতোই, নিয়মিত হাঁটার অভ্যাসও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এক মাস ধরে প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটলে আপনার শরীর ও মনে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে:

১. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও মেদ হ্রাস: হাঁটা ক্যালরি খরচ করতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যালরি পোড়ানো সম্ভব। এর ফলে শরীরের বাড়তি মেদ কমতে শুরু করবে এবং আপনি ধীরে ধীরে কাঙ্ক্ষিত ওজন অর্জন করতে পারবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ মিনিট হাঁটা ও কম চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস মিলে ওজন হ্রাসে ডায়েটের চেয়েও কার্যকর।

২. হজম প্রক্রিয়া উন্নত: নিয়মিত হাঁটা হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে। এটি পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যার ফলে খাবার ভালোভাবে হজম হয় এবং গ্যাস, অম্বল ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যাগুলো কমে আসে।

৩. ডিটক্সিফিকেশন ও ত্বকের উজ্জ্বলতা: হাঁটার সময় শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ঘামের মাধ্যমে দেহের টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। এটি লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

৪. পেশি ও হাড়ের দৃঢ়তা: এক মাস নিয়মিত হাঁটলে আপনার পায়ের পেশি শক্তিশালী হবে এবং হাড় মজবুত হবে। এটি হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি কমায় এবং দেহের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা বাড়ায়।

৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ: প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস অন্ত্রকে সক্রিয় করে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।

৬. হৃদরোগ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: হাঁটা হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, মন্দ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়, যার ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত হাঁটার ফলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে, যার ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে আসে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।

৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: নিয়মিত হাঁটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি, ফ্লু এবং অন্যান্য ছোটখাটো সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।

৯. মানসিক প্রশান্তি ও চাপ হ্রাস: শারীরিক কার্যকলাপ মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে। প্রতিদিন হাঁটলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমে আসে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এটি ঘুমের মান উন্নত করতেও সহায়ক।

১০. তারুণ্য ধরে রাখা ও আয়ু বৃদ্ধি: সামগ্রিকভাবে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালো থাকায় এবং রোগের ঝুঁকি কমায় নিয়মিত হাঁটা তারুণ্য ধরে রাখতে এবং আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে।

কীভাবে হাঁটবেন?

  • সময়: প্রতিদিন ৩০ থেকে ৬০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটুন, যেন শরীর থেকে ঘাম বের হয়।

  • নিয়মিততা: সপ্তাহে অন্তত চার বা পাঁচ দিন হাঁটার চেষ্টা করুন, তবে সম্ভব হলে প্রতিদিনই হাঁটুন।

  • সঠিক পোশাক: আরামদায়ক জুতো এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন।

  • সময় নির্বাচন: ভোরবেলা বা সন্ধ্যায় হাঁটা সবচেয়ে ভালো, কারণ তখন বাতাস নির্মল থাকে এবং তাপমাত্রা আরামদায়ক থাকে।

সতর্কতা: যাদের বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা আছে (যেমন: হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, বা গুরুতর বাত-ব্যথা), তারা এই অভ্যাস শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।