মঙ্গলবার, ০৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ২৪ জুন ২০২৫ , ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৬ কোটি টাকা অনুদান পাচ্ছে ৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুন ২৮, ২০২৫, ১২:০০ এএম

৬ কোটি টাকা অনুদান পাচ্ছে ৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ঢাকা: দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে এবং শিক্ষার আলো সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ১০০ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৬ কোটি ৪১ লাখ ২ হাজার টাকার বিশেষ অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। এই বিশাল অঙ্কের আর্থিক সহায়তা শিক্ষা খাতে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন দর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত বিস্তারিত চিঠি জারি করা হয়েছে, যা সুবিধাভোগীদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে।

এই বিশেষ অনুদান প্রদানের মাধ্যমে সরকার শিক্ষার সমতা নিশ্চিত করতে চাইছে। পাশাপাশি, যারা আর্থিক অসচ্ছলতা, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে পিছিয়ে পড়ছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যও এর পেছনে কাজ করছে। এই সহায়তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও ব্যবহৃত হবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করবে।

অনুদান বন্টন ও বিস্তারিত সুবিধাভোগী তালিকা: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই অনুদান দেশের প্রায় ৭ হাজার ১০০টি সত্তার মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে বন্টন করা হবে। প্রতিটি খাতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

প্রথমত, দেশের ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ১ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হবে। এই অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামো আধুনিকীকরণ, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ক্রয়, শ্রেণিকক্ষ সংস্কার এবং ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ব্যয় করা যাবে। এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান উন্নত করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়ক হবে।

দ্বিতীয়ত, ২৫০ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রত্যেকে ৩০ হাজার টাকা করে মোট ৭৫ লাখ টাকা অনুদান পাবেন। এই বিশেষ সহায়তা মূলত সেই সকল শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য নির্ধারিত, যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন বা কোনো দৈব-দুর্যোগের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটি তাদের চিকিৎসা ব্যয় বা ব্যক্তিগত সংকট মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হবে।

তৃতীয়ত, ৪ হাজার ৪৭ জন মাধ্যমিক পর্যায়ের (৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি) শিক্ষার্থী প্রত্যেকে ৮ হাজার টাকা করে মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা অনুদান পাবে। এই অর্থ শিক্ষার্থীদের বই কেনা, স্কুল ফি পরিশোধ এবং অন্যান্য শিক্ষা সংক্রান্ত খরচ মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

চতুর্থত, ১ হাজার ৪২৮ জন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রত্যেকে ৯ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা অনুদান পাবে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই সহায়তা তাদের উচ্চশিক্ষার পথে একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

পঞ্চমত, ১ হাজার ২৭৪ জন স্নাতক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষার্থী প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাবে। এই অনুদান উচ্চশিক্ষারত শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কাজ, টিউশন ফি এবং অন্যান্য একাডেমিক ব্যয় মেটাতে সাহায্য করবে, যা তাদের উচ্চশিক্ষাকে আরও সুগম করবে।

এই বিস্তৃত অনুদান কর্মসূচি শিক্ষা খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এটি প্রতিটি স্তরের শিক্ষার্থীর প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুদান বিতরণ: স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিতকরণ: অনুদান বিতরণের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং দ্রুত করতে সরকার ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ সরাসরি তাদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে অনলাইনে পাঠানো হবে, যা অর্থ প্রাপ্তি প্রক্রিয়াকে ঝামেলামুক্ত করবে। অন্যদিকে, শিক্ষক-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস 'নগদ'-এর মাধ্যমে সরাসরি তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হবে। এই ডিজিটাল পদ্ধতি সুবিধাভোগীদের দোরগোড়ায় অর্থ পৌঁছে দেবে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে সহায়তা করবে। এটি সরকারের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার লক্ষ্যের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অগ্রাধিকার নীতি ও সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি: এই অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু অগ্রাধিকার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে, যা সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়। গত ১৭ জুন ২০২৫ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বাজেট শাখার উপসচিব লিউজা-উল-জান্নাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অগ্রাধিকার তালিকা জানানো হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, দেশের অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নশীল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টা স্পষ্ট।

এছাড়াও, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এই অনুদানের জন্য অগ্রাধিকার পেয়েছেন। ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিস, পক্ষাঘাত, বক্ষব্যাধি, কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন এবং দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই সহায়তার জন্য বিশেষভাবে বিবেচিত হয়েছেন। সমাজের দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, অসহায়, রোগাক্রান্ত, দরিদ্র, মেধাবী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাও এই অনুদানে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এই বিষয়ে মন্তব্য করে বাসস'কে জানিয়েছেন, "সরকার শিক্ষাকে সবার জন্য সমভাবে বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে অনগ্রসর কিন্তু ভালো ফল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বিশেষ অনুদান বরাদ্দ অব্যাহত রয়েছে।" তার এই মন্তব্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা পরিকল্পনা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ইঙ্গিত দেয়।

উল্লেখ্য, অনুদান প্রদানের এই নীতিমালা গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর প্রণীত হয়েছিল। এই নীতিমালার আওতায় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা পর্যায়ে এবং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিগুলো আবেদনপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে যোগ্য সুবিধাভোগীদের নির্বাচন করেছে, যা পুরো প্রক্রিয়াটিকে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করেছে।

পরবর্তী খবর
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক ২০২৫

পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিশালী পাকিস্তান, সামগ্রিক শক্তিতে এগিয়ে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম

Image

এআই দিয়ে তৈরি এইচএসসি পরীক্ষার মুহূর্ত।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক শক্তির তুলনা করা হলে সেখানে জনবল, অস্ত্রশস্ত্র, বাজেট, পারমাণবিক ক্ষমতা ও কৌশলগত নীতি–আদর্শের এক জটিল হিসাব–নিকাশ প্রতিফলিত হয়। ১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর থেকে দুই দেশ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আছে। এ সময়ে একাধিক যুদ্ধে জড়ানোর ইতিহাস রয়েছে তাদের। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উভয় দেশ উল্লেখ করার মতো সামরিক শক্তিও বজায় রেখে চলেছে।

গত মঙ্গলবার ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ওই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এ হামলায় পাকিস্তানের মদদ থাকার অভিযোগ তুলে ভারত দেশটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে পাকিস্তানও।

এমন প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান সামরিকভাবেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে—এ আশঙ্কা অনেকের। প্রাসঙ্গিকভাবে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসছে। এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুসারে করা এ প্রতিবেদন ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

সামগ্রিক সামরিক র‍্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক

‘জিএফপি ২০২৫’–এ ৬০টির বেশি বিষয়ের (জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা ইত্যাদি) ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০.১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

সামরিক–বেসামরিক জনশক্তি
প্রচলিত যুদ্ধে জনবল গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। ভারত ও পাকিস্তানের জন্যও তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশাল জনসংখ্যা ও স্থলবাহিনীর ওপর উভয় দেশেরই নির্ভরতা রয়েছে।

ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি (বিশ্বে দ্বিতীয়)। সক্রিয় জনশক্তি ৬৬ কোটি ২০ লাখ। সক্রিয় সেনা ১৪ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। রিজার্ভ সেনা ১১ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লাখ ৩০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। মোট সামরিক (সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনী) জনবল ৫১ লাখ।

অন্যদিকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৫ কোটি ২০ লাখ (বিশ্বে পঞ্চম)। সক্রিয় জনবল ১০ কোটি ৮০ লাখ। সক্রিয় সেনা ৬ লাখ ৫৪ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। রিজার্ভ সেনা ৬ লাখ ৫০ হাজার। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য জিএফপিতে স্পষ্টভাবে পরিমাপ করা হয়নি, তবে উল্লেখযোগ্য (রেঞ্জার্স ও ফ্রন্টিয়ার কোরসহ)। মোট সামরিক শক্তি ১৭ লাখ (সক্রিয়, রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনী)।

ভারতের জনবল পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনীও বড়। পাকিস্তান যদিও কম জনবল নিয়ে কাজ করে, তবে তাদের মধ্যে ‘মুজাহিদ’–এর মতো আইএসআই–নিয়ন্ত্রিত অনিয়মিত বাহিনীগুলো রয়েছে।

প্রতিরক্ষা বাজেট

ভারতের বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। এ বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয় ভারতের সামরিক খাতে প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত এবং জনশক্তির আধুনিকীকরণে আরও বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তা এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।

স্থলবাহিনী

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্থলবাহিনী। দেশ দুটির মধ্যে ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। দুদেশের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯ সালে প্রচলিত ঘরানার যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে।

ভারতের ট্যাংক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।

পাকিস্তানের ট্যাংক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান ৫০ হাজার (আনুমানিক)। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি (৩৭৫ স্বয়ংক্রিয় হাউইটজারসহ)। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি), এসএসজি নৌ ও স্পেশাল সার্ভিস উইং। এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও সমীহ করার মতো।

ট্যাংক, সশস্ত্র যান ও কামানে সংখ্যাগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। পাকিস্তানেরও ট্যাংকবহর প্রতিযোগিতামূলক। এ বহর চীনের ভিটি–৪–এর মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা। রয়েছে এম১১৩ ও আল–ফাহাদের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা স্থল সমরযান।

বিমানবাহিনী

আধুনিক যুদ্ধে, বিশেষত দ্রুত সাড়া দেওয়া ও নির্ভুল আক্রমণের জন্য বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫১৩ থেকে ৬০৬টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এসইউ–৩০এমকেআই, রাফায়েল, তেজস। রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস–৪০০। হেলিকপ্টার আছে অ্যাপাচি ও চিনুক। আরও আছে চারটি ‘এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল (এইডব্লিউঅ্যান্ডসি)’ ব্যবস্থা।

পাকিস্তানের মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯ থেকে ১ হাজার ৪৩৪টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৩২৮ থেকে ৩৮৭টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ–১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, জেএফ–১৭ থান্ডার, মিরেজ থ্রি/ফাইভ। আছে ভারতের চেয়ে বেশি যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী হেলিকপ্টার (এএইচ–১এফ কোবরাসহ)। এইডব্লিউঅ্যান্ডসি আছে সাতটি, যা ভারতের চেয়ে বেশি।

ভারতের বিমানবহর আকারে বড় ও বৈচিত্র্যময়; তবে স্কোয়াড্রনের ঘাটতি আছে। পাকিস্তানের বিমানবহর তুলনামূলক ছোট হলেও তার আধুনিকায়ন হচ্ছে। পাকিস্তানের এইডব্লিউঅ্যান্ডসি–সুবিধা বাড়তি নজরদারিতে ব্যবহার করা হয়।

নৌবাহিনী

ভারত মহাসাগরে ভারতের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় ও আরব সাগরে পাকিস্তানের অভিযানের জন্য নৌসক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জাহাজ রয়েছে ২৯৪টি। বিমানবাহী রণতরি আছে ২টি। সাবমেরিন ১৮টি (পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্টসহ)। ডেস্ট্রয়ার ১৩টি। ফ্রিগেট ১৪টি। প্যাট্রোল নৌযান ১০৬টি। যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী বিমান ৭৫টি (নৌবাহিনীর)। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ৬৭ হাজার ৭০০।

পাকিস্তানের জাহাজ ১২১টি। সাবমেরিন ৮টি। ফ্রিগেট ৯টি। প্যাট্রোল নৌযান ১৭টি। এ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৮টি। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০।

ভারতীয় নৌবাহিনী তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী ও গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানোর উপযোগী। পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত ছোট নৌবাহিনী মূলত উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক অভিযানে মনোযোগ দেয়। বিমানবাহী রণতরি না থাকা ও সীমিতসংখ্যক যুদ্ধবিমানের কারণে গভীর সমুদ্র দেশটির নৌবাহিনীর অভিযান চালানোয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

পারমাণবিক সক্ষমতা

ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট। পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।

অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

কৌশলগত জোট ও জটিল মূল্যায়ন

ভারতের কৌশলগত জোটে রয়েছে ইসরায়েল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। আছে সীমিত পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও।

জনবল, সামরিক ব্যয় ও প্রচলিত অন্যান্য প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের এগিয়ে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরমাণু ও কৌশলগত অস্ত্রের সমৃদ্ধ ভান্ডার, অপ্রতিসম যুদ্ধকৌশল ও চীনের জোরালো সমর্থন দেশটিকে এক সুবিধাজনক প্রতিরক্ষা অবস্থানে রেখেছে।

প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের আধুনিকায়নে অন্যতম বাধা তার আমলাতন্ত্র ও দ্বৈত মনোযোগ (চীন–পাকিস্তান)। পুরোনো বিমানবহরও দেশটির জন্য একটি বাধা। ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানে বেশি মনোযোগও দেশটির আরেক দুর্বলতা।

অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংগ্রাম, তুলনামূলক ছোট জনশক্তি, পুরোনো সামরিক সরঞ্জাম ও আঞ্চলিক উত্তেজনা তার সামরিক সক্ষমতায় বাধা হয়ে আছে।

আরএস