শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
সারজিস আলম

মুজিববাদের কোমর ভাঙতে হবে: সারজিস আলমের হুঁশিয়ারি

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম

মুজিববাদের কোমর ভাঙতে হবে: সারজিস আলমের হুঁশিয়ারি

ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও রাজনীতিবিদ সারজিস আলম সম্প্রতি এক বক্তব্যে বাংলাদেশে 'মুজিববাদী' শক্তির ষড়যন্ত্র এবং 'ভারতীয় আধিপত্যবাদের' বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি "অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধা ছাত্রজনতা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দকে" সালাম জানিয়ে মুজিববাদের আদর্শিক মোকাবিলার ওপর জোর দিয়েছেন, যা শুধু আইনি পথে নয়, বরং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপায়ে এর "কোমর ভেঙে" দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তার এই বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সারজিস আলম তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও "মুজিববাদীদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি" এবং তারা গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো সক্রিয় রয়েছে। তিনি "ফ্যাসিস বিরোধী ২০২৪ এর শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার" আহ্বান জানিয়েছেন, তবে এই ঐক্য মানে "কারো অন্ধ দালালি নয়" বলেও সতর্ক করেন। চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট চালানো এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।

সারজিস আলম স্পষ্ট করেছেন যে "মুজিববাদ একটি আদর্শ" এবং কেবল আইনিভাবে এর মোকাবেলা সম্ভব নয়; বরং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এর "কোমর ভেঙে দিতে হবে"। তিনি "মুজিববাদ এবং স্বৈরাচারের প্রশ্নে অভ্যুত্থানের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার" আহ্বান জানিয়েছেন। আলম দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশে "মুজিববাদী ভারতপন্থী শক্তিগুলো" নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে। দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের মাটিতে "ভারতীয় আধিপত্যবাদ" বা অন্য কোনো দেশের আধিপত্যবাদের জায়গা হতে দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, "এই বাংলাদেশে বাংলাদেশ পন্থী কোন দেশপন্থী কোন বাদপন্থী কোন শক্তির আর জায়গা হবে না"।

 

বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হাজারের অধিক ছাত্রজনতা জীবন দিয়েছে এবং তাদের "গত জুলাই ও আগস্টের" যে স্বপ্ন ছিল, তা এখনো পূরণ হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে "সুশীল সরকারের ভূমিকা নয়, বরং অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের ভূমিকা" আশা করা হয়েছে। "খুনি হাসিনার বিচার" এবং সেই বিচারের রায় কার্যকর দেখতে পাওয়ার জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। বিচার বিভাগকে কোনো দলের বিচার বিভাগ হিসেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী বাহিনী হিসেবে দেখতে না চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সারজিস আলম স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, "৭২ এর মুজিববাদী সংবিধানকে একপাশে না রেখে" বাংলাদেশ পন্থী বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। নারীদের অধিকার এবং সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের অধিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বক্তব্যে ১৯৪৭ সালের উপনিবেশ বিরোধী আকাঙ্ক্ষা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং ২০২৪ সালের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে "আগামীর বাংলাদেশ গড়ার" প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

 

ফ্যাসিবাদ বিরোধী ২০২৪ সালের শক্তিকে "ঐক্যবদ্ধ থাকার" আহ্বান জানানো হলেও, তা যেন "কারো অন্ধভাবে দালালি" না হয়, সেদিকে সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রশ্নে "ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার" অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা থাকবে, তবে তা যেন "ব্যক্তি আক্রমণে কোনদিন রূপ না নেয়" এবং "রাজনীতির যে সৌন্দর্য" তা যেন ধারণ করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। বক্তব্যের শেষে তিনি "ফ্যাসিস বিরোধী ২০২৪ শক্তি ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমরা আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবো" বলে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন এবং "লড়াইয়ের রাজপথে অথবা বিজয়ে" পুনরায় দেখা হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে এরপর ২০২৪ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র জনতার আন্দোলনের অন্যতম রূপকার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংগ্রামী কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব জাহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখবেন বলেও জানানো হয়।