জুলাই ১৮, ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
২০২৬ বিশ্বকাপ থেকে ফুটবলের পেনাল্টির নিয়মে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে ফিফা। পেনাল্টি কিক থেকে রিবাউন্ডে গোল করা নিষিদ্ধ হতে পারে, যা খেলাকে নতুন মাত্রা দেবে। এই সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত জানুন।
ফুটবলকে আরও গতিশীল এবং ন্যায্য করার লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) প্রতিনিয়ত নিয়মের সংস্কার করে থাকে। ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তারা পেনাল্টির নিয়মে বড় ধরনের পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করছে। বিশেষ করে কাতার বিশ্বকাপে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের মতো গোলরক্ষকদের 'মাইন্ড গেম' এবং পেনাল্টির পর রিবাউন্ড থেকে গোল করার সুযোগ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় এই পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হচ্ছে।
ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তগুলোর একটি হলো পেনাল্টি কিক। কিন্তু ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে এই নিয়মে আসতে পারে আমূল পরিবর্তন, যা ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফুটবলের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) এমন একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে যেখানে পেনাল্টি শট গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলে, বা বল ক্রসবার কিংবা পোস্টে লেগে ফিরে এলে আক্রমণকারী দল আর ফিরতি বলে শট নিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সেটি সরাসরি গোলকিক হিসেবে বিবেচিত হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম 'দ্য সান' এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নিয়মটি চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে কারণ কর্মকর্তারা মনে করেন, পেনাল্টি থেকে রিবাউন্ডে গোল করার সুযোগ আক্রমণকারী দলকে একটি "অন্যায্য সুবিধা" দেয়। পেনাল্টি পাওয়ার ফলে একটি দল এমনিতেই গোল করার একটি দারুণ সুযোগ পায়। যদি গোলরক্ষক পেনাল্টি বাঁচিয়েও দেন, তারপরও রিবাউন্ড থেকে গোল করার সম্ভাবনা থাকে, যা গোলরক্ষক এবং রক্ষণাত্মক দলের জন্য দ্বিগুণ শাস্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পেনাল্টির রিবাউন্ড থেকে গোল হয়েছে, যা ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই নতুন নিয়ম চালু হলে পেনাল্টি কিক একটি 'একক' শট হিসেবে বিবেচিত হবে, অনেকটা হকি বা বাস্কেটবলের ফ্রি-থ্রোয়ের মতো। অর্থাৎ, যদি শট থেকে সরাসরি গোল না হয়, তাহলে খেলা সেখানেই বন্ধ হয়ে যাবে এবং প্রতিপক্ষ দল গোলকিক পাবে। এর ফলে পেনাল্টিকে আরও নির্দিষ্ট এবং তার লক্ষ্য অর্জনকে আরও চ্যালেঞ্জিং করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই প্রস্তাবটি আগামী নভেম্বর মাসে আইএফএবির বার্ষিক ব্যবসায়িক বৈঠকে আলোচিত হবে এবং পরের বছর মার্চে বার্ষিক সাধারণ সভায় ভোটাভুটি হতে পারে। যদি অনুমোদন হয়, তাহলে ২০২৬ সালের ১লা জুন থেকে এটি কার্যকর হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের ঠিক আগে।
এছাড়াও, ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) এর ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা চলছে। বর্তমানে ভিএআর শুধুমাত্র গোল, পেনাল্টি এবং সরাসরি লাল কার্ডের মতো ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করতে পারে। কিন্তু নতুন নিয়মে ভুলভাবে দেওয়া কর্নার কিক এবং দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের মতো বিষয়গুলোও ভিএআর দ্বারা পর্যালোচনা করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে, তবে তা শুধুমাত্র 'সুস্পষ্ট ত্রুটি'র ক্ষেত্রে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার শর্তে। এই পরিবর্তনগুলো ফুটবলে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার মাত্রা আরও বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনগুলো খেলাকে আরও আধুনিক ও কৌশলগতভাবে সমৃদ্ধ করবে। তবে কিছু ফুটবলপ্রেমী এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে এই সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। কাতার বিশ্বকাপের পেনাল্টি শুটআউটে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের বিতর্কিত কার্যকলাপের পর পেনাল্টি নিয়মে পরিবর্তন আনার দাবি জোরালো হয়। মার্টিনেজ নিজেও বলেছেন যে আধুনিক নিয়মের সাথে মানিয়ে নিতে তার কোনো সমস্যা নেই।
আপনার মতামত লিখুন: