বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে বাঁশ চাষে স্বাবলম্বী ২ হাজার পরিবার

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ১৭, ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে বাঁশ চাষে স্বাবলম্বী ২ হাজার পরিবার

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে বাঁশ চাষ করে প্রায় দুই হাজার পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছেন, যা জেলার কৃষি অর্থনীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। গৃহস্থালি সামগ্রী, বসতঘর, ফসলের ক্ষেতের মাচা, নির্মাণ সামগ্রী এবং মাছ ধরার ফাঁদসহ নানান শিল্পে বাঁশের চাহিদা বাড়ায় স্থানীয় চাষিদের মধ্যে বাঁশ চাষে আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর এখানকার চাষিরা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বাঁশ বিক্রি করছেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।

লালমাই পাহাড়ের সমতল থেকে চূড়া পর্যন্ত অন্তত একশো একর ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে তল্লা, মুলি, বরাক, কাটা বরাক, হিল বরাক, বোম, কনক, বারি ও পেঁচাসহ নানান জাতের বাঁশ চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যম বিজয়পুর, ধনমুড়া, বড় ধর্মপুর, রাজারখলা, ভাঙ্গামুড়া, জামমুড়া, বৈষ্ণবমুড়া, লালমতি, গন্ধমতি ও সালমানপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি বাঁশঝাড় চোখে পড়ে। চাষে কম খরচ এবং অধিক মুনাফা লাভের কারণে স্থানীয় চাষিদের মধ্যে বাঁশ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। চাষিরা জানান, একবার বাঁশ রোপণ করলে প্রতি বছর দুই থেকে তিনবার বাঁশ বিক্রি করা যায়, যা তাদের জন্য খুবই লাভজনক।

বাঁশের এ বিপুল উৎপাদন স্থানীয় কুটির শিল্পকেও সমৃদ্ধ করেছে। জেলা শহরতলীর নমশূদ্র পল্লীর প্রায় পনেরোশ পরিবারের পেশা এই কুটির শিল্প, যেখানে বাঁশের কুলা, খাঁচা, ওরা, ঝুঁড়ি, ডালা ও মাছ ধরার ফাঁদসহ বিভিন্ন দরকারি পণ্য তৈরি হয়। বাজারে প্রতিটি পণ্য মানভেদে ৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করে কারিগররা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া, ঋণ পরিশোধ এবং আনুষঙ্গিক খরচ মেটান। নমশূদ্র পল্লী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সহস্রাধিক উদ্যোক্তা তাদের কাঁচামালের জন্য লালমাই পাহাড়ের বাঁশের ওপর নির্ভরশীল।

কুটিরশিল্পী সুরমা রাণী ও বালা রাণী জানান, বছরের পর বছর ধরে এই পেশায় তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হচ্ছে। তারা স্বল্পমূল্যে লালমাই পাহাড়ের গুণগত মানের বাঁশ পেয়ে তাদের প্রাণের শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত এই বাঁশ জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় চাষিরা মনে করেন, সরকারি সহায়তা পেলে বাঁশ চাষ আরও বাড়বে এবং এর মাধ্যমে রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

তবে, লালমাই পাহাড়ের কিছু অংশে অবৈজ্ঞানিকভাবে কাসাভা চাষের ফলে পাহাড় তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে এবং মাটি ক্ষয় হচ্ছে। পরিবেশবিদরা মনে করেন, ভারী বর্ষণসহ নানা দুর্যোগে পাহাড়ের ক্ষয় রোধে বাঁশের শিকড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই তারা কাসাভা ছেড়ে বাঁশ চাষে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য চাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, প্রায় চারশো বছর ধরে সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে উন্নত মানের বিভিন্ন জাতের বাঁশ চাষ হচ্ছে। গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাহিদাও বেশ। বাঁশ চাষে চাষিরা লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। তিনি বলেন, কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের বাঁশ এখন শুধু একটি বিকল্প ফসল নয়, বরং এটি কৃষির টেকসই সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।