সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সেদিনই শিবির আন্দোলনটা নিজেদের কব্জায় নিয়ে যায়

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১, ২০২৫, ১১:৩০ এএম

সেদিনই শিবির আন্দোলনটা নিজেদের কব্জায় নিয়ে যায়

ছবি- সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের পেছনের মূল শক্তি কারা ছিল এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি বাংলাভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক কেফায়েত শাকিলের একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্ট ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যেখানে তিনি আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, আন্দোলনটির মোড় ঘুরিয়ে দিতে শিবির নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

২০১৯ সালের ১৯ জুলাই, তৎকালীন সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ৮ দফার ঘোষণা দিয়ে পরদিন (২০ জুলাই) কালো ব্যাজ ধারণ ছাড়া কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানান তিন সমন্বয়ক নাহিদ, হাসনাত ও সারজিস।

তবে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ওইদিনই ৯ দফা ঘোষণা করে তা প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রচার করা নিয়ে জীবনবাজি রাখা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে আব্দুল কাদেরের মাধ্যমে। মূলত সেদিনই শিবির আন্দোলনটা নিজেদের কব্জায় নিয়ে যায়।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাংলাভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল। তার ওই স্ট্যাটাসটি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে তিনি লেখেন, ‘ঢাকার রাস্তায় যখন প্রতি মুহূর্তে ছাত্র জনতার লাশের স্তূপ জমছিল, তখন আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিন সমন্বয়ক। সেখানে তারা ৮ দফার ঘোষণা দিয়ে পরদিন ২০ জুলাই কালো ব্যাজ ধারণ ছাড়া কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই বলে জানান। সেই সময় হাসনাত বিবিসিকে বলেন, নাহিদের সঙ্গে ফোনে আলাপ করে তারা এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’।

শাকিল জানান, সেই কর্মসূচি দেখে তার এক সহকর্মী সাদ্দাম হোসাইন (Saddam Hossain) কেঁদেই দিয়েছিলেন এবং এটিকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, “বাসায় ঢুকতেই আমার সময় টিভির সাবেক কলিগ ও কালবেলার প্রতিবেদক অন্তু মুজাহিদ (Antu Mujahid) কল করে বলেন, ‘শাকিল ভাই ৯ দফা পেয়েছেন? আমি বললাম, কিসের ৯ দফা? আট দফা দেখেই তো হতাশ।’”

এরপরই আব্দুল কাদেরের নামে ৯ দফার একটি এমএমএস পান সাংবাদিক শাকিল। তিনি বলেন, “কাদের আমাকে ফোনে বলেন ৮ দফা না, ৯ দফার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা ৮ দফা ছড়িয়েছে এটা আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। তারপর আমরাই সেটা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের চেষ্টা চালাই। বার বার তাদের কল দিয়ে পরামর্শ দেই। মিডিয়াগুলোতে প্রিন্ট প্রেস রিলিজ ও সিডিতে ভিডিওবার্তা পাঠাতে বলি।”

এসবই ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের আন্দোলন প্রচেষ্টা ছিল উল্লেখ করে এই সাংবাদিক আরও বলেন, “এগুলো যে শিবিরের কাজ ছিল তখন না জানলেও অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিবির প্রকাশ্যে আসার পর জেনেছি। ওই মোবাইল নম্বরটি থেকে শিবিরের মিডিয়া বিভাগ আমার সঙ্গে আরও বেশ কয়েকবার যোগাযোগও করেছে। সেই সময়ের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছে, প্রকাশনা পাঠিয়েছে।”

কেফায়েত শাকিল বলেন, “মূলত সেদিনই শিবির আন্দোলনটা নিজেদের কব্জায় নিয়ে যায়। সেই সময়ের সাক্ষী হিসেবে বলতে পারি, পদে সমন্বয়ক না হলেও ১৯ জুলাই থেকে মূলত আন্দোলন সমন্বয় সাদিক-সিবগাতুল্লাহই করেছেন। আর সামনে থেকে লড়েছেন আব্দুল হান্নান মাসুদ, রিফাত রশিদ, আব্দুল কাদেররা।”

তিনি বলেন, “২০ জুলাইয়ের পর ১ দফার ঘোষণা পর্যন্ত নাহিদের আর কোনো ভূমিকা কারও জানা আছে কিনা জানি না। অবশ্য এই সময়ের মধ্যে সে পুলিশের হেফাজতেই বেশি ছিল। কিন্তু উনারা যেভাবে ক্রেডিট নিয়ে মারামারি করছেন, এতে জাতীয় ঐক্যে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে। তাই আমার জানা সত্যটা না লিখে পারলাম না।”