সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে? ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাঠ করলেন ঐতিহাসিক দলিল

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে? ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাঠ করলেন ঐতিহাসিক দলিল

ছবি- সংগৃহীত

ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্র পাঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এই দলিলটি ২০২৪ সালের জুলাই গণ‑অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার দাবি করে এবং দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তাল চিত্রের রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে।

ঘোষণাপত্রের প্রথম পয়েন্টে বলা হয়েছে যে উপনিবেশবিরোধী দীর্ঘ সংগ্রামে মানুষ পাকিস্তানির বঞ্চনা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। দ্বিতীয় পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সূচিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার আকঙ্ক্ষা পূরণে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে জনগণ।

তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি ও কাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করে যে পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষুণ্ণ করেছে। চতুর্থ দফায় ব্যাখ্যিত হয়েছে যে একদলীয় বাকশাল শাসন, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করায় ১৯৭৫ সালের সিপাহী‑জনতার বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনর্বহাল হয়। পঞ্চম দফায় ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম থেকে ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। ষষ্ঠ দফায় ১/১১ ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতায় উঠার পথে বাধা সৃষ্টি হয়নি বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

সপ্তম দফায় গত ১৬ বছরে গড়ে ওঠা একদলীয় ও ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার জন্য সংবিধানের অবৈধ পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়েছে। অষ্টম দফায় অভিহিত হয়েছে গুম‑খুন, দুর্নীতি, বাকস্বাধীনতা হরণ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দায় শেখ হাসিনা সরকারের ওপর। নবম ও দশম দফায় বলা হয়েছে সামাজিক ও পরিবেশগত ধ্বংস, অর্থ পাচার, ব্যাংক লুটসহ উন্নয়নের নামে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলেও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এগারতম ও দ্বাদশ দফায় উল্লেখ রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জেলজুলুম ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামের কথা। ত্রয়োদশ ও চৌদ্দতম দফা স্বাধীনতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের কথা তুলে धরা হয়েছে।

পনেরো তম পর্যন্ত বলা হয়েছে বিরোধী দল ও সংগঠনগুলো দমন পীড়নের শিকার হয়েছে এবং গণরোষ সৃষ্টি হয়েছে। ষোলো ও সতেরো তম দফায় সরকারের বিরুদ্ধে কোটাভিত্তিক বৈষম্য ও বর্বরতা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আঠারো তম দফায় নারকীয় হত্যাকাণ্ডে নারী‑শিশুসহ হাজার মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়া উল্লেখ করা হয়েছে। উনিশতম দফায় ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং এই গণ‑অভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিশিশ দফায় বলা হয়েছে অবৈধ দ্বাদশ সংসদ ভেঙে ৮ আগস্ট ২০২৪ এ অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে।

একুশতম দফায় জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরা হয়েছে, এবং দুই দুই দশম দফায় রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংস্কারের বাসনা ব্যক্ত হয়েছে। তেইশ ও চব্বিশ নম্বর দফায় শহীদদের জাতীয় বীর ঘোষণা, আহত পরিবার ও ছাত্রজনতাকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার দাবি এসেছে। পঁচিশ ও ছাব্বিশ দফায় সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের অঙ্গীকার উঠে এসেছে। সাতাশ ও আটাশ নাম্বার দফায় টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ‑জলবায়ু সহিষ্ণু নীতি প্রতিপাদন করা হয়েছে। উনত্রিশ ও ত্রিশতম দফায় ছাত্র‑গণ‑অভ্যুত্থান ২০২৪-এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করা হয়েছে এবং ঘোষণা করা হয়েছে এটি সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হবে। শেষ, অটানের অষ্টম দফায় ৫ আগস্ট ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এই দলিলটি শুধু একটি দলিল নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারে নতুন পথ প্রশস্ত করার একটি স্থায়ী দলিল হিসেবে বিবেচিত। এসব দফায় ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ ও গণমানুষের প্রত্যাশার স্বতঃস্ফূর্ত বক্তব্য উল্লেখযোগ্যভাবে ফুটে উঠেছে।