আগস্ট ৪, ২০২৫, ১১:১৭ এএম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় চোখে আঘাতপ্রাপ্ত বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারীর চিকিৎসার দায়িত্বে ছিল রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই আন্দোলনের ভয়াবহ চিত্র। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ১ হাজার ৭৪ জনের মধ্যে ৩৯ জন সম্পূর্ণভাবে চোখ হারিয়েছেন।
গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছররা গুলিতে অসংখ্য আন্দোলনকারী চোখে আঘাত পান। গুরুতর আহত রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দেশের পাশাপাশি চীন, নেপাল, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে পরামর্শ নেওয়া হয়। এমনকি, গুরুতর অসুস্থ ৯ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও পাঠানো হয়েছে।
আইএমইডি'র '২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপন' প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন করতে গিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চোখে আঘাতপ্রাপ্ত মোট ১ হাজার ৭৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ২৭৮ জন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত ৭৯৬ জনকে (৭৮১ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন পর্যন্ত ৬৭৫ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে এবং ১২১ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
প্রতিবেদনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক তথ্য হলো, চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে ৩৯ জনের উভয় চোখ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও, ৬৫ জনের চোখ সম্পূর্ণ ভালো হয়েছে এবং ৪৫০ জনের এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লবের মতো সংকটকালীন পরিস্থিতিতে হাসপাতালটি বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে হিমশিম খেতে হয়েছে। এছাড়াও, মূল ভবনের বেজমেন্টে পানি জমে থাকা, কিচেন ও ওয়াশিং ইউনিটের অসম্পূর্ণ কাজ এবং নিম্নমানের ড্রেনেজ ব্যবস্থার মতো অবকাঠামোগত সমস্যাও তুলে ধরা হয়েছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবেলার জন্য আইএমইডি ৮টি সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জামের উন্নতি, মানবসম্পদ বৃদ্ধি, জরুরি সংকট ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং চক্ষু প্রতিস্থাপন ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, চোখ হারানো রোগীদের আজীবন ভাতা এবং আংশিক দৃষ্টিশক্তি হারানোদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।