সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

তোরা মার ওগো’—বলে শিক্ষার্থীদের হাতে ইট তুলে দিয়েছিলেন বৃদ্ধা।

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ৪, ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম

তোরা মার ওগো’—বলে শিক্ষার্থীদের হাতে ইট তুলে দিয়েছিলেন বৃদ্ধা।

ছবি- সংগৃহীত

গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সারাদেশের মতো ফরিদপুরেও আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল। সেই উত্তাল দিনগুলোতে ফরিদপুরের আন্দোলনে এক অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত জন্ম দেন প্রায় ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। যখন পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাচ্ছিল, তখন তিনি সাহস দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ইট তুলে দিয়ে বলেছিলেন, 'তোরা মার ওগো (ছাত্রলীগের নেতাদের)। আমি মরি সমস্যা নাই।' তার এই একটি বাক্যই যেন আন্দোলনের গতিপথ বদলে দিয়েছিল।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান মূলত সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও, এটি খুব দ্রুতই সারা দেশের সাধারণ মানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। ফরিদপুরে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১০ জুলাই বাংলা অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। প্রথম দিকে পুলিশ শান্ত থাকলেও, ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হেলমেট ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তখন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এই হামলার পরও নারীরা পিছু হটেননি, বরং তারা আরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।


৩১ জুলাই ফরিদপুরের গোয়ালচামট এলাকায় ছাত্রীরা সাদা পোশাকে এবং স্কুল-কলেজের ড্রেস পরে মিছিল বের করেন। তাদের পোস্টারে লেখা ছিল, 'রক্তের দাগ শুকায় নাই', 'যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ', 'যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবেই বাংলাদেশ'। এই নারীদের মিছিল ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দখল করে এগিয়ে যেতে থাকে, যা সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

 ৩ আগস্ট ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে বিশাল একটি মিছিল বের হয়, যেখানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও অংশ নেন। মিছিলটি ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের দিকে এগোতেই পুলিশ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় তাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।

ঠিক সেই মুহূর্তে আশেপাশের দোকানপাট থেকে সাধারণ মানুষ, এমনকি এক ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধাও বেরিয়ে আসেন। তিনি বলেন, 'তোরা মার ওগো (ছাত্রলীগের নেতাদের)। আমি মরি সমস্যা নাই।' এই বলে তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে ইট তুলে দেন। তার এই সাহসী উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে আন্দোলনকারীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এরপর সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে এবং পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

 এই আন্দোলনে ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে ৫ আগস্ট কোতোয়ালি থানার সামনে সামসু মোল্লা (৫৯) নিহত হন। তিনি ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত একমাত্র শহীদ। তার মৃত্যুর ঘটনা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে।