আগস্ট ৫, ২০২৫, ১০:২৩ এএম
গত বছরের ৫ আগস্ট, দুপুরের আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয় চট্টগ্রামের রাজপথে। শুরুতে অনেকেই এই খবরকে গুজব বলে মনে করলেও, দুপুরের পর টেলিভিশন স্ক্রলে সেনাপ্রধানের জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার খবর ভেসে আসতেই মানুষজন নিশ্চিত হন যে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর নিশ্চিত হতেই চট্টগ্রামের অলিগলি থেকে জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে।
দীর্ঘ ১৫ বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দমন-পীড়নের অবসানের প্রত্যাশায় সেদিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাগুলো ছাত্র-জনতার স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই প্রতিবেদক দেখতে পান, মোড়ে মোড়ে মিষ্টি বিতরণ চলছে, একে অপরের সঙ্গে ফুল বিনিময় করছেন মানুষজন। অনেকে বিজয় মিছিলে প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি তুলে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের স্মৃতি সংরক্ষণ করছেন। দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে সেদিন শহরের নানা পেশার ও বয়সের মানুষ আনন্দ-উল্লাস করেন।
দিনের শুরুটা শান্তিপূর্ণ থাকলেও বিকেলের পর পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। কিছু জায়গায় জনতার আনন্দ-উল্লাস বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়। কোতোয়ালি, পতেঙ্গা, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং ও লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন থানাকে ঘিরে ফেলে জনতা। এসব থানায় ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশের অস্ত্র ও গুলি লুট হয়। এসময় প্রাণ বাঁচাতে অনেক পুলিশ সদস্য থানা ছেড়ে পালিয়ে যান, কেউ কেউ পোশাক পরিবর্তন করে জনতার সঙ্গে মিশে যান। এ ছাড়া চট্টগ্রামজুড়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর বাসায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
এক বছর আগের সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত মো. সাইফ উদ্দিন বলেন, "এক বছর আগে এ দিনে ১৫ বছরের স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটেছিল। মনে হয়েছিল আমরা দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা শ্বাস ফিরে পাচ্ছি।" তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী চেতনায় বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে।
চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, "সেদিন বিকেলে খবর শুনে আমার মনে হচ্ছিল, আমরা মুক্ত। রাজনৈতিক কারণে আমার মতো অনেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেননি। সেদিন লোকজন রাস্তায় নেমেছিল, যেন সব বাঁধন খুলে গেছে।"
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, "সকালে এক দফা দাবিতে আন্দোলনে ছিলাম। দুপুরে খবর পাই হাসিনা পালিয়েছে। কী আনন্দ, আশপাশের কেউ কেউ আনন্দে কান্না করেছেন। সেদিন মুক্তিকামী চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নেমে পড়েছিল।"