সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

রূপপুর পারমাণবিকের প্রথম ইউনিটের ‘কোল্ড অ্যান্ড হট’ টেস্ট সফল

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ৬, ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম

রূপপুর পারমাণবিকের প্রথম ইউনিটের ‘কোল্ড অ্যান্ড হট’ টেস্ট সফল

ছবি- সংগৃহীত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই কেন্দ্র দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে একটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিট চালু করার আগে বিভিন্ন ধরনের কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ‘কোল্ড অ্যান্ড হট’ টেস্ট, যা টার্বাইনে বাষ্প সরবরাহকারী পাইপলাইনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে এক বড় মাইলফলক।

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুরের প্রথম ইউনিটের ‘কোল্ড অ্যান্ড হট’ টেস্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই সফল পরীক্ষার মাধ্যমে টার্বাইনে বাষ্প সরবরাহকারী পাইপলাইনগুলো কার্যকরী ও নিরাপদ বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। বুধবার (৬ আগস্ট) এনপিসিবিএল (নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড) এবং রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এতমস্ত্রয় এক্সপোর্ট এক যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে এই সাফল্যের কথা জানায়।


এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাসান জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার আগে এ ধরনের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে টার্বাইন যন্ত্রপাতির নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, “২ মেগাপ্যাস্কেল চাপ এবং ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাষ্পের সাহায্যে ব্লো-ডাউন প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করা হয়। নকশার চাহিদা অনুযায়ী এই প্যারামিটারগুলো নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে পাইপলাইনে কোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ময়লা, আবর্জনার কণা বা আর্দ্রতা থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়।”

ড. জাহেদুল হাসান আরও জানান, এই পরীক্ষা চলাকালে পার্শ্ববর্তী বায়ুমণ্ডলে বাষ্প নির্গত হওয়ার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দের সৃষ্টি হয়, যা আগে থেকেই অনুমেয় ছিল। এ বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে আগেই অবহিত করা হয়েছিল, যাতে তারা কোনোভাবে আতঙ্কিত না হন। বাষ্প সরবরাহকারী পাইপলাইনকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করতে পরবর্তী ধাপে আরও অধিক পরিমাণ বাষ্প ব্যবহার করে এই ব্লো-ডাউন প্রক্রিয়াটি পুনরায় চালানো হবে। এর ফলে কার্যক্রম চলাকালে যে লোড পড়বে, তার কাছাকাছি লোডে যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ার এতমস্ত্রয় এক্সপোর্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সি ডেইরি জানান, কমিশনিং কার্যক্রমের এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি সম্পন্ন হওয়ায় প্রথম বিদ্যুৎ ইউনিট চালু এবং গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পথে আরও এক ধাপ অগ্রগতি অর্জিত হলো। তিনি বলেন, “সর্বাধুনিক রুশ ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর ভিত্তিক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী কয়েক দশক ধরে পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, যা দেশের বর্তমান চাহিদার প্রায় দশ শতাংশ পূরণ করবে।”

উল্লেখ্য, রুশ আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট দুটি ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রসাটমের প্রকৌশল শাখা।