শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২
বৃত্তি পরীক্ষা

প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা: কারা অংশ নেবে, কীভাবে হবে শিক্ষার্থী বাছাই?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৮:০২ পিএম

প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা: কারা অংশ নেবে, কীভাবে হবে শিক্ষার্থী বাছাই?

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও চালু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা, যা একসময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ তৈরি করতো। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পরীক্ষা যেমন শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের সুযোগ দেবে, তেমনি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এবার বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু নতুন নিয়ম ও শিক্ষার্থী বাছাইয়ের পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে।

কারা অংশ নিতে পারবে?

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) নীতিমালা অনুযায়ী, এবার শুধু নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই এই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

  • পিটিআই (প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়

  • সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় (যেসব স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা একসঙ্গে পরিচালিত হয়)

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, কিন্ডারগার্টেন বা অন্যান্য বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবার এই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যই এই সুযোগটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী বাছাই প্রক্রিয়া কীভাবে হবে?

বৃত্তি পরীক্ষার জন্য কোনো বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। প্রতিটি বিদ্যালয় তাদের পঞ্চম শ্রেণির মোট শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য মনোনীত করতে পারবে। অর্থাৎ, একটি বিদ্যালয়ে যদি ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ ৪০ জন এবং ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকলে সর্বোচ্চ ২০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।

এই ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করার প্রক্রিয়াটিও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর:

  • প্রথম সাময়িক পরীক্ষার (প্রথম প্রান্তিক) ফলাফলের ভিত্তিতে এই শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে।

  • প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলে যারা প্রথম সারিতে (মেধাতালিকায় শীর্ষে) থাকবে, সেই মেধাক্রম অনুযায়ী ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করে তাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।

  • প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে আগামী ২৪ জুলাই, ২০২৫-এর মধ্যে এই বাছাইকৃত শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠাতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বৃত্তি শাখার কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি এই নীতিমালা অনুসরণ না করে, তাহলে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর বণ্টন

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা মোট পাঁচটি বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিটি বিষয়ের জন্য পূর্ণমান ১০০ করে থাকবে। পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় হবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট

বিষয়গুলো হলো:

  • বাংলা (১০০ নম্বর)

  • ইংরেজি (১০০ নম্বর)

  • প্রাথমিক গণিত (১০০ নম্বর)

  • বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (৫০ নম্বর)

  • প্রাথমিক বিজ্ঞান (৫০ নম্বর)

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান - এই দুটি বিষয়কে একত্রে করে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে।এই পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে এবং শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

কবে হতে পারে বৃত্তি পরীক্ষা


প্রতিবছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা ও ছুটির তালিকাসহ বাৎসরিক শিক্ষাপঞ্জি প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৫ সালের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, প্রাথমিকে তৃতীয় প্রান্তিক বা বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পর বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
 
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বৃত্তির পরীক্ষার সম্ভাব্য একটি তারিখও জানিয়েছে। সেটি হলো- ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে ২১ ডিসেম্বর বাংলা, ২২ ডিসেম্বর ইংরেজি, ২৩ ডিসেম্বর গণিত এবং ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ তারিখে পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।