জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৬:২১ পিএম
দুর্গম পাহাড়, চরের জনপদ কিংবা ব্রডব্যান্ড-বঞ্চিত সীমান্ত—যেখানে এখনো পৌঁছায়নি ফাইবার অপটিক, সেসব অঞ্চলের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’ আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বোর্ডরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই যুগান্তকারী তথ্য জানান। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত স্টারলিংকের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলও উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন স্টারলিংকের ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার এবং আন্তর্জাতিক কৌশল ও সরকারি সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথস।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও উদ্যোগে বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা দিতে শুরু করেছে। এটি শুধু প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, বরং বাংলাদেশের ডিজিটাল কাঠামোর জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে যে সমস্যা ছিল, স্টারলিংকের আগমনে সেই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরীক্ষামূলক থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা ও লাইসেন্স:
প্রায় তিন মাস ধরে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চালানোর পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংক তার পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করলো। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে 'স্যাটেলাইট অপারেটর লাইসেন্স' এবং 'রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটাস লাইসেন্স' অর্জন করেছে, যার উভয়টির বৈধতা ১০ বছর। এই লাইসেন্স প্রাপ্তি স্টারলিংকের বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রমের প্রতি সরকারের সমর্থনকে ইঙ্গিত করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, স্টারলিংকের সেবা নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকদের প্রাথমিকভাবে ৪২ হাজার টাকা খরচে একটি সেটআপ কিট কিনতে হবে। এই কিটে থাকবে স্যাটেলাইট রিসিভার ডিস, রাউটার, পাওয়ার সাপ্লাইসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ। একবার সেটআপ কিট কেনা হয়ে গেলে, গ্রাহকরা মাসিক ভিত্তিতে দুটি প্যাকেজের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারবেন:
-
স্টারলিংক রেসিডেন্সিয়াল (Starlink Residential): এই প্যাকেজের মাসিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এতে গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস (Mbps) পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন।
-
স্টারলিংক লাইট (Starlink Lite): অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানে সক্ষম এই প্যাকেজের মাসিক মূল্য ৪ হাজার ২০০ টাকা।
এই দুটি প্যাকেজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রাহকদের প্রয়োজন ও ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী ইন্টারনেট সেবা গ্রহণের সুযোগ দেবে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে ফাইবার অপটিক কেবল পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বা ব্যয়বহুল, সেসব এলাকার মানুষের জন্য স্টারলিংক একটি নির্ভরযোগ্য ও উচ্চগতির ইন্টারনেট বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে।
আপনার মতামত লিখুন: