আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম
বাবার প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে পুত্রের কলমে উঠে এলো হৃদয়ের অব্যক্ত কথা। ‘প্রিয় বাবা’ শিরোনামের এই নাশিদ প্রকাশের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এক আবেগঘন আবহের, যা নাড়া দিয়েছে হাজারো মানুষের হৃদয়।
"বিড়ালের মতো পাঁচশ বছর বেঁচে থাকার কোনো লাভ নাই, সিংহের মতো এক ঘণ্টা বাঁচতে চাই"—এই বজ্রকণ্ঠ যার, সেই আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে এক আবেগঘন উদ্যোগ নিলেন তার পুত্র মাসুদ সাঈদী। বাবার প্রতি ভালোবাসা, স্মৃতি আর জমে থাকা কষ্টগুলোকে তিনি তুলে ধরেছেন গানের কথায়।
‘প্রিয় বাবা’ শিরোনামের এই নাশিদটি কোনো সাধারণ গান নয়, বরং এটি তার পিতার প্রতি হৃদয়ে জমানো কথার এক শৈল্পিক রূপ, যা তিনি নিজেই লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। মাসুদ সাঈদীর লেখা প্রথম এই গানটি প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাবার শূন্যতায় কাতর এক সন্তানের এই আকুতি ছুঁয়ে গেছে অগণিত মানুষকে, আর এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ দিনাজপুর টিভি তার দর্শকদের জন্য তুলে ধরছে।
প্রকাশিত নাশিদটির পেছনের গল্প বলতে গিয়ে মাসুদ সাঈদী তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, "আজ কোরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রহ. এর শাহাদাত বার্ষিকী। আজকে মূলত: আমার পৃথিবীটা হারিয়ে ফেলার দিন। আমার আব্বাই ছিলেন আমার পৃথিবী, ছিলেন আমার সব।"
বাবার প্রতি তার এই গভীর অনুভূতিই গানটির মূল উপজীব্য। একজন অ-পেশাদার গীতিকার হিসেবে তার প্রথম এই প্রয়াসটি তিনি উৎসর্গ করেছেন তার বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। গানটির প্রতিটি শব্দে মিশে আছে একজন সন্তানের তার বাবাকে হারানোর বেদনা এবং তার রেখে যাওয়া আদর্শকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার আকুতি।
এই আবেগঘন গানটিতে সুরারোপ ও কণ্ঠ দিয়েছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় শিল্পী মাহমুদ ফয়সাল। মাসুদ সাঈদী জানান, তিনি কেবল একবারই মাহমুদ ফয়সালকে গানটি করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এরপর গানের সুর তৈরি থেকে শুরু করে ঢাকার নাজরাহ স্টুডিওতে রেকর্ডিং, বিভিন্ন স্থানে ভিডিও ধারণ, পোস্টার ডিজাইন এবং সার্বিক প্রচারণার মতো কঠিন দায়িত্বগুলো মাহমুদ ফয়সাল একাই সামলেছেন। এই অবদানের জন্য মাসুদ সাঈদী তার প্রতি শুধু ধন্যবাদ নয়, বরং অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, "মাহমুদ ফয়সালকে শুধু ধন্যবাদ জানালে আমি আমার বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে যাবো।" গানটির ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, মাসুদ সাঈদী তার বাবার কবর জিয়ারত করছেন, পিরোজপুরে প্রতিষ্ঠিত ‘আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন’ ঘুরে দেখছেন এবং তার বাবার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে বিষণ্ণ মনে সময় কাটাচ্ছেন। এর সাথে আল্লামা সাঈদীর পুরনো ওয়াজ মাহফিলের কিছু দুর্লভ ফুটেজ যুক্ত করা হয়েছে, যা শ্রোতা-দর্শকদের স্মৃতিকাতর করে তুলেছে।
গানটি রিলিজ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ (সসাস)’। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে এই উদ্যোগ গ্রহণ করায় সসাসের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মাসুদ সাঈদী। তিনি তার পোস্টে গানটি কেমন হয়েছে, তা জানানোর জন্য مخاطبینদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাদের সাড়া পেলে ভবিষ্যতেও লেখার চেষ্টা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গানটি হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এবং কমেন্ট বক্সে শ্রোতাদের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া উপচে পড়ছে।
শেষ পর্যন্ত, ‘প্রিয় বাবা’ কেবল একটি নাশিদ হয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি হয়ে উঠেছে বাবার প্রতি এক সন্তানের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং তার আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখার এক শক্তিশালী মাধ্যম, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুপ্রেরণা জোগাবে।