শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২

‍‍`সংগ্রাম সমরে‍‍`: নতুন গানে ফিরে এলো বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস

শাহিন ইসলাম

আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১১:০৩ পিএম

শুধুমাত্র সুর আর কথার গাঁথুনিতে কীভাবে একটি জাতির আত্মত্যাগের ইতিহাস জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে? ‘সংগ্রাম সমরে’ শিরোনামের একটি নতুন গান ঠিক সেই কাজটিই করেছে, যা বাঙালির রক্তে কেনা স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করেছে।

সম্প্রতি এইচআর মিডিয়া অফিশিয়াল থেকে প্রকাশিত এই দেশাত্মবোধক গানটি শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করতে শুরু করেছে। গানটির মূল শক্তি এর কথায়, যা রচনা করেছেন ডক্টর হাফিজ রহমান। তিনি তার লেখনীতে নিপুণভাবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়কে ধারণ করেছেন। গানের প্রতিটি শব্দ যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা জীবন্ত দলিল, যা শ্রোতাকে সেই আগুনঝরা দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগ, মুক্তির জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকার গল্প এই গানে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। দিনাজপুর টিভির পক্ষ থেকে গানটির বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর কাব্যিক ভাষা এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলতে বিশেষভাবে সহায়ক হবে। গানটির সুরারোপ এবং কণ্ঠ দিয়েছেন অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান।

পেশাগত পরিচয়ের বাইরে এসে শিল্পের প্রতি তার এই অনুরাগ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তার দৃঢ় অথচ আবেগঘন কণ্ঠস্বর গানটির মূল ভাবকে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। সুরের বিন্যাসে তিনি একদিকে যেমন সংগ্রামের কঠোরতাকে তুলে ধরেছেন, তেমনই বিজয়ের আনন্দ এবং ত্যাগের মহিমাকে এক সুতোয় গেঁথেছেন। গানের অডিও ডিজাইন করেছেন হুসাইন আদনান সাগর, যা সুর ও কণ্ঠের আরও শ্রুতিমধুর করে তুলেছে। গানটির আবেদনকে পূর্ণতা দিয়েছে এর দৃষ্টিনন্দন ভিডিও নির্মাণ। মিনহাজুল আবেদিন তামিমের পরিচালনায় এবং এইচএম নেয়ামুলের সম্পাদনায় নির্মিত ভিডিওটি গানের বার্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এতে ঐতিহাসিক ফুটেজের পাশাপাশি বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধিদের দেখানো হয়েছে, যা অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একটি চমৎকার সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। এটি কেবল একটি মিউজিক ভিডিও নয়, বরং বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের একটি ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ। তামিম ভয়েসের রেকর্ডিং এবং এইচআর মিডিয়ার প্রযোজনায় নির্মিত এই গানটি প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা এবং শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে যেকোনো পেশার মানুষই শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারে। এই গানটি সেই সকল নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধার প্রতিও একটি বিনম্র শ্রদ্ধা, যাদের আত্মত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।

এই গানটি নতুন প্রজন্মের কাছে কেবল একটি দেশাত্মবোধক সঙ্গীত হিসেবেই নয়, বরং আত্মপরিচয় খুঁজে পাওয়ার একটি অনুপ্রেরণা হিসেবেও থেকে যাবে এবং বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে।