আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
যে বজ্রকণ্ঠ একদিন কাঁপিয়ে দিত মাহফিলের ময়দান, এবার সেই কণ্ঠের স্মৃতিকে সুরে বাঁধলো সাইমুম। আল্লামা সাঈদীকে নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই শিল্পীগোষ্ঠীর নতুন গান ‘সুর তাঁর মৌ মৌ’ প্রকাশের পরই তৈরি হয়েছে এক আবেগঘন আবহের।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যিনি তার অনুসারীদের কাছে ‘কোরআনের পাখি’ হিসেবে পরিচিত, তার প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে তাকে ঘিরে শ্রদ্ধা ও স্মরণের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। তার জীবন, কর্ম এবং বিতর্কিত কারাবাসকে কেন্দ্র করে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে ইসলামিক সংগীত। এই ধারায় সর্বশেষ এবং সম্ভবত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজনটি এসেছে দেশের কিংবদন্তি সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী’র পক্ষ থেকে। ‘সুর তাঁর মৌ মৌ’ শিরোনামে প্রকাশিত এই নাশিদটি কেবল একটি সংগীত নয়, বরং এটি যেন আল্লামা সাঈদীর কণ্ঠ, তার মোলায়েম ভাষার আবেদন এবং কোরআনের প্রতি তার নিবেদিত জীবনের এক শৈল্পিক দলিল। এই পুরো প্রেক্ষাপটটিই দিনাজপুর টিভি তার দর্শকদের সামনে তুলে ধরছে।
আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুর পর থেকে তাকে নিয়ে গান তৈরির যে ঢেউ উঠেছিল, তাতে নতুন মাত্রা যোগ করলো সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর এই পরিবেশনা। গানটির শিরোনাম "সুর তাঁর মৌ মৌ বুলবুলি ভোর, মোলায়েম কথা জুড়ে অভূত আদর" – এই লাইন দুটিই যেন সাঈদীর পরিচয়ের সারসংক্ষেপ। গীতিকার আতিফ আবু বকর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার লেখনীতে সাঈদীর সেই সম্মোহনী কণ্ঠের কথা তুলে ধরেছেন, যা একসময় লক্ষ লক্ষ মানুষকে কোরআনের দিকে আকৃষ্ট করত। গানের কথায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে যে, তার কোরআনের আহ্বান ছিল নিরুপম এবং তা মানুষের অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে দিত। গানটির সুরারোপ করেছেন তরুণ সুরকার রাআদ ইজামা, যার সুরে মিশেছে একদিকে শ্রদ্ধা, অন্যদিকে হারানোর এক গভীর বিষণ্ণতা।
এই অনবদ্য পরিবেশনার পেছনে রয়েছে একদল প্রতিভাবান শিল্পী ও কলাকুশলী। গানটিতে সম্মিলিতভাবে কণ্ঠ দিয়েছেন সাইমুমের একঝাঁক তরুণ শিল্পী—কে এম সাব্বির, রাআদ ইজামা, ওমর ফারুক, আবরার ফাহিম আবির এবং আব্দুল কাইয়ুম ইয়াদ। তাদের সম্মিলিত কণ্ঠ গানটিকে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ইনোভেশন স্টুডিওতে ধারণকৃত এই গানটির অডিও কম্পোজিশনে ছিলেন আমির হামজা খান এবং ভিডিও সম্পাদনা ও পোস্টার ডিজাইনে ছিলেন মাহফুজ আলম। পুরো প্রজেক্টটির চিত্রনির্দেশনা ও পরিচালনায় ছিলেন যথাক্রমে রাআদ ইজামা ও জাহিদুল ইসলাম, যা সাইমুমের ব্যানারে একটি সুসংগঠিত প্রয়াস হিসেবেই শ্রোতাদের সামনে এসেছে।
এই গানটি সাঈদীকে নিয়ে তৈরি হওয়া অন্যান্য জনপ্রিয় সংগীতের তালিকায় একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। এর আগে তার পুত্র মাসুদ সাঈদীর লেখা ‘প্রিয় বাবা’ এবং শিশুশিল্পী মুয়াজ আলীর কণ্ঠে ‘কুরআনের পাখি আজ দিয়ে গেল ফাঁকি’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে সাইমুমের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের অংশগ্রহণ এই ধারাটিকে প্রাতিষ্ঠানিক এবং শৈল্পিক দিক থেকে আরও শক্তিশালী করেছে। গানের কথায় কেবল তার কণ্ঠের প্রশংসাই করা হয়নি, বরং তাকে ‘জিহাদের সেনাপতি’ এবং ‘মজলুম জনতার প্রতিবাদী রোক’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে, যা তার আপোসহীন সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। ‘মাটি আর মানুষের কাছাকাছি খুব, নিবেদিত ছিলো তার হৃদয় মনন’—এই লাইনগুলো প্রমাণ করে, তিনি সাধারণ মানুষের কতটা কাছাকাছি ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত ‘সুর তাঁর মৌ মৌ’ কেবল একটি সংগীত হয়ে থাকেনি, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি প্রজন্মের কাছে আল্লামা সাঈদীর আদর্শ, সংগ্রাম এবং কোরআনের প্রতি তার ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার এক শৈল্পিক প্রচেষ্টা, যা সময়ের সাথে সাথে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে।