জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এবার ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠান ভেদিনার অয়েল রিফাইনারির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ’র পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান কাজা কালাস এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই পদক্ষেপকে ক্রেমলিনের যুদ্ধ বাজেটে আঘাত হানার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে এক বার্তায় কাজা কালাস বলেন, “আমরা ক্রেমলিনের যুদ্ধ বাজেটের মূলে আঘাত করতে চাই। সে জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে) আমাদের অবস্থান দৃঢ়।” ইইউ'র এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।
ভেদিনার অয়েল রিফাইনারি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের ভেদিনার নগরে অবস্থিত। এটি ১৯৯৬ সালে ভারতীয় কোম্পানি নায়ারা এনার্জি লিমিটেড এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসনেফটের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শোধনাগারের ৪৯.১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক রোসনেফট, যা এই নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ। যেহেতু রাশিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্ব রয়েছে, ইইউ মনে করছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে, যা তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা প্রয়োজন।
ভেদিনার অয়েল রিফাইনারির পাশাপাশি ইইউ রাশিয়া-ভারত তেল বাণিজ্যের ‘পতাকা নিবন্ধন’ বা ফ্ল্যাগ রেজিস্ট্রির ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন থেকে ভারতীয় পতাকাবাহী কোনো জাহাজ আর রাশিয়ার তেল বহন করতে পারবে না। এটি ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সমুদ্রপথে তেল পরিবহনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশটির তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। এই দুটি পক্ষই ছিল রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। তবে রুশ তেলের অপর ক্রেতা ভারত কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি না করে উপরন্তু রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন, তারপরেই আছে ভারত।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এই প্রথম ভারতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল ইইউ। এটি ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ভবিষ্যতে সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা দেখার জন্য আন্তর্জাতিক মহল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
আপনার মতামত লিখুন: