জুলাই ৩০, ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক বিভিন্ন কার্ড বিতরণ করা হয়। এসব কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেক সময় স্থানীয় পর্যায়ে কার্ড বিতরণে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কার্ড বিতরণে এমন অভিযোগ উঠেছে, যেখানে একজন নির্বাচিত মহিলা সদস্যই আরেক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও অর্থ লেনদেনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কার্ড বরাদ্দে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে ইউপি সদস্যদের মনোনীত ব্যক্তিদের মাঝে টাকার বিনিময়ে কার্ড প্রদান করা হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন একই ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (১, ২ ও ৩) ইউপি সদস্য লাভলী আক্তার।
অভিযোগে লাভলী আক্তার উল্লেখ করেন, ইউনিয়নের ২৭৫টি ভিজিডি কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়ার সময় সেনাবাহিনী উপস্থিত থেকে নিয়ম অনুযায়ী বিতরণের নির্দেশ দিলেও, ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তৌইবুর রহমান ও ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ জুয়েল নিজস্ব ব্যক্তিদের মনোনীত করছেন।
তিনি জানান, নিজের ওয়ার্ডের দুই অসহায় ও গরিব ভোটারের জন্য কার্ড প্রদানের সুপারিশ করলে ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ জুয়েল তাকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বলেন। পরে তিনি নিরুপায় হয়ে অর্থ প্রদান করেন এবং তাকে দুটি কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে আশ্বস্ত করা হয়। তিনি আরও দাবি করেন, ইউপি সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে কোনো সুপারিশ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি বরং অন্যদের কাছ থেকেও একইভাবে অর্থ গ্রহণ করে কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় ভ্যানচালক আয়নাল হক বলেন, "ভিজিডি কার্ড পেতে জুয়েল মেম্বারকে ২টি কার্ডের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। মহিলা মেম্বারদের সামনেই টাকাটা দেই।" ফাতেমা নামে এক সুবিধাভোগী নারী বলেন, "মেম্বার ভিজিডি কার্ডের জন্য আমার কাছ থেকে তিনহাজার টাকা এবং এক বস্তা চাল নিয়েছে। এবার আবার পাঁচ বস্তা চাল দেওয়ার সময় মেম্বর আরও এক বস্তা চাল নিয়ে নেয়। তখন সবাই বলার পর চালের বস্তাটা ফিরে দেয়।" কৃষি শ্রমিক মহব্বত আলী বলেন, "আমরা দিনে আনি দিন খাই। টাকা দিতে না পারায় আমার মত গরিবরা কার্ড পাই না। যারা টাকা দেয়, তারাই পায়।" একই কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দা বীরেন ও বিধবা রহিমা বেগম। তারা বলেন, অর্থ না থাকায় প্রকৃত অসহায় হয়েও তারা কার্ড থেকে বঞ্চিত।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জুয়েল সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। যাতে আমি পরিষদে যেতে না পারি, সেই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।" তবে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান তইবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির বলেন, "একজন সংরক্ষিত নারী সদস্য লিখিতভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
আপনার মতামত লিখুন: