বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

অবৈধ বালু উত্তোলনে গ্রামবাসীর ধাওয়া, ড্রেজারে আগুন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম

অবৈধ বালু উত্তোলনে গ্রামবাসীর ধাওয়া, ড্রেজারে আগুন

ছবি- সংগৃহীত

নদীমাতৃক বাংলাদেশে বালু উত্তোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম হলেও, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন প্রায়শই পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন, ফসলি জমির ক্ষতি এবং বসতভিটা বিলীন হওয়ার ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে, স্থানীয় প্রশাসন যখন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তখন ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা নিজেরাই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরে এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কালিরচর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ফসলি জমি ও বসতভিটা রক্ষায় গ্রামবাসী বালু দস্যুদের ধাওয়া দিয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা দুইটি ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া একই দিন সদর বালুর মহালে উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে আব্দুর রহমান ও মো. জাকির নামে দুই ড্রেজার শ্রমিককে আটক করেছে। পরে তাদের ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে জেলা সদরের আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে গ্রামবাসী বালুদস্যুদের ধাওয়া দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা দুইটি ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

গ্রামবাসীর অভিযোগ: কালিরচর গ্রামবাসীর দাবি, বালু মহালের নির্ধারিত স্থান ছেড়ে গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলন করায় ক্ষোভে তারা এই কাজ করেছে। তাদের অভিযোগ, বালু দস্যুরা যেখানে বালু উত্তোলন করছে, তা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। নৌ-পথের ডাকাত কিবরিয়া মিজি, জিএস মনির ও কালিরচর গ্রামের বাচ্চু মেম্বার এখানে অবৈধ বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে।

একাধিক স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের দেওয়া মেঘনা নদীর ভাসানচর বালু মহালের ইজারাদারের লোকজন কয়েকদিন ধরেই গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছিল। এতে গ্রামের নদী তীরবর্তী ফসলি জমি ও বসতভিটা ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীর মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করে। এতে আজ বুধবার সকালে গ্রামের লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলনে বাঁধা দিতে মহালে ছুটে যান। এক পর্যায়ে উত্তেজিত গ্রামবাসী দুইটি থেমে থাকা লোড ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দেয়।

কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা খলিল মিজি (৬৫) এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বলেন, “বালুর মহাল ইজারা হয়েছে ভাসানচর মৌজায়। আর ওরা আমাদের কালিরচর মৌজায় বালু কাটছে। এখানে সর্বশেষ জরিপে নদী ঘেঁষা জমি রয়েছে। এখানে তিন ফসলি জমি রয়েছে। আর গ্রামবাসী জমি রক্ষায় প্রতিহত করছেন, যাতে বাপদাদার সম্পদ রক্ষা হয়।”

কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা রিনা বেগম বলেন, “গ্রামের মানুষ অসহায়। বাড়িঘর ভেঙে গেলে কই গিয়া থাকব। যারা বালু কাটে তারা বড়, গ্রামের নিরীহ মানুষের কথা কেউ বলে না। আমরা এর প্রতিকার চাই।”

ইজারাদারের বক্তব্য ও প্রশাসনের অভিযান: ভাষানচর বালু মহালের ইজারাদার জিএস মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “আমরা বৈধ মহাল ইজারা নিয়েছি। আমাদের প্রশাসনের বুঝিয়ে দেওয়া স্থানে বালু উত্তোলন করছি। গ্রামবাসী অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নদীর গভীরে উত্তোলন করলেও, তারা অবৈধ বালু উত্তোলন অপবাদ দিচ্ছে।”

সদরের চরআব্দুল্লাহ নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুব আলম বলেন, “আমরা আজ সকালে ওই এলাকায় অভিযান করেছি। তাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনিয়ম হলে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম হাসানুর রহমান বলেন, “আমরা আজ বালুর মহালের স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় দুইজনকে আটক করা হয় এবং পরে দুই লাখ জরিমানা করে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”