সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

কীটনাশকের ভয়াল থাবা: কৃষিজমিতে গবাদি পশুর মৃত্যু

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম

কীটনাশকের ভয়াল থাবা: কৃষিজমিতে গবাদি পশুর মৃত্যু

ছবি- সংগৃহীত

মানিকগঞ্জে কৃষিজমিতে কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত এক গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

বারসিকের গবেষণা বলছে, কৃষকরা বছরের পর বছর ধরে কার্বন্ডাজিম, গ্লাইফোসোট ও ক্লোরেন্টাডেন-এর মতো সরকারিভাবে নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করে আসছেন। এসব বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবে কেবল ফসলের নয়, মানুষ ও গবাদি পশুর স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।


  • গবাদি পশুর মৃত্যু: সিংগাইর উপজেলার কৃষক মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, কীটনাশক প্রয়োগের পর তার ১০টি গরু, ১১টি হাঁস এবং একটি পুকুরের মাছ মারা যায়, যার আর্থিক ক্ষতি ১১ লাখ টাকার বেশি। অন্য কৃষকরাও জানিয়েছেন, কীটনাশক প্রয়োগকৃত জমির ঘাস খেয়ে তাদের গরু মারা গেছে।

  • কৃষকদের স্বাস্থ্য সমস্যা: কীটনাশক প্রয়োগকারী অনেক কৃষকই বমি, মাথা ঘোরা, ত্বকে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ব্যয় করতে হচ্ছে।

  • সচেতনতার অভাব: গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ কৃষক কীটনাশকের প্যাকেটে লেখা সতর্কতা বুঝে উঠতে পারেন না। তারা প্রায়শই দোকানদারের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহার করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নাবিলা চৌধুরী বলেন, কীটনাশকের প্রভাবে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, প্রজনন ক্ষমতা, শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং জন্মগত ত্রুটি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

ভেটেরিনারি সার্জন ডা. দীপু রায় জানান, গবাদি পশুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মানবদেহের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, কিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক চিহ্নিত করে বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। তবে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প চাষ পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।