আগস্ট ৮, ২০২৫, ১০:১৩ এএম
সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একজন মা কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন, তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ নেত্রকোণার দুর্গাপুরের সুপ্রিতা পন্ডিত। স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি একাই মেয়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সংসারের ব্যয়ভার ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ মেটাতে বেছে নিয়েছেন রাজমিস্ত্রির মতো কঠিন পেশা। তার এই অদম্য সংগ্রাম স্থানীয়দের মধ্যে যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনি তার এই করুণ অবস্থা মানবিক সহায়তারও দাবি রাখে।
নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার সুপ্রিতা পন্ডিত, একজন সংগ্রামী নারী, যিনি তার মেয়ের পড়াশোনার খরচ ও সংসার চালাতে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। ১২ বছর আগে স্বামী তাকে এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে সুপ্রিতা একাই তার মেয়ে ত্রয়ী এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
পৌর শহরের দক্ষিণপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী সুপ্রিতা জানান, স্বামী চলে যাওয়ার পর তার কোলজুড়ে আসে মেয়ে ত্রয়ী। মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি প্রথমে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। কিন্তু মেয়ের পড়াশোনার খরচ বাড়তে থাকায় তিনি এখন রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। এই কঠোর পরিশ্রমে তিনি প্রতিদিন মাত্র ৪০০ টাকা পান, যা দিয়ে তার মেয়ের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসারের অন্য প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হয়।
সুপ্রিতার মেয়ে ত্রয়ী পন্ডিত বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। সে একজন মেধাবী ছাত্রী এবং তার স্বপ্ন বড় হয়ে একজন পুলিশ অফিসার হওয়া। ত্রয়ী বলে, “আমি পুলিশ অফিসার হয়ে মায়ের দেখাশোনা করতে চাই। মা অনেক কষ্ট করেছে। আমার বাবা চলে গিয়েছে তাতে কি হয়েছে? আমার মা সব সময় আমার পাশে রয়েছে।”
সুপ্রিতার এই সংগ্রামের কথা জানতে পেরে সদ্য বিদায়ী দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তাকে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায়ে সহযোগিতা করব। তার চাহিদা জেনে উপজেলা পর্যায়েও তাকে সহযোগিতা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।” তিনি আরও জানান, শুধু সুপ্রিতা নয়, তারা বিভিন্ন সময়ে অসহায় দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
সুপ্রিতার এই লড়াই তার প্রতিবেশীদের মধ্যেও প্রশংসিত হয়েছে। সবাই চান, তার মেয়ে পড়াশোনা করে মায়ের কষ্টের প্রতিদান দিক।