আগস্ট ৬, ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে রাশিয়া এখনও ব্যাপক পরিমাণে জ্বালানি সম্পদ বিক্রি করে যুদ্ধের খরচ চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন ও কঠোর হুমকি দিয়েছেন, যা কার্যকর হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। তার এই হুমকি শুধু তেলের দাম নয়, বরং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যদি আগামী শুক্রবারের (৮ আগস্ট) মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়, তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যরত দেশগুলোর ওপর নতুন 'সেকেন্ডারি শুল্ক' আরোপ করা হবে। এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে বিশ্বজুড়ে আইফোন ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষিত এই সেকেন্ডারি শুল্ক নীতি অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে পণ্য বা সেবা গ্রহণকারী কোনো দেশের পণ্য যদি যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা হয়, তবে তার ওপর শতভাগ কর আরোপ করা হবে। তেল ও গ্যাস রাশিয়ার সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত, আর চীন, ভারত ও তুরস্ক হলো মস্কোর সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, “আমি অনেক কিছুর জন্য বাণিজ্যকে ব্যবহার করেছি, কিন্তু যুদ্ধ থামানোর জন্য এটা দুর্দান্ত।”
এর আগে ভেনেজুয়েলার তেল ক্রেতাদের শাস্তি দিতেও ট্রাম্প প্রশাসন একই ধরনের সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করেছিল। তবে এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। রাশিয়া এখনো বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ বছর রাশিয়ার তেল রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনোমিকসের কিয়েরান টম্পকিনস বলেছেন, "রুশ জ্বালানির ক্রেতাদের ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার মূল পথ হবে জ্বালানির দামের স্তর।" যদি এই শুল্ক কার্যকর হয়, তাহলে বিশ্ববাজারে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের সরবরাহ হ্রাস পাবে। সরবরাহ কমে গেলে দাম বেড়ে যেতে পারে, যা ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তীব্র মূল্যস্ফীতি ঘটিয়েছিল।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তেলের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের কারণে তিনি উদ্বিগ্ন নন। টম্পকিন্স অবশ্য মনে করেন, এবার দামের ওপর প্রভাব অতটা প্রবল নাও হতে পারে, কারণ ওপেকের (বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ ও তাদের বন্ধুদের) কাছে উল্লেখযোগ্য অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে, রাশিয়া ইতোমধ্যেই বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তাদের তথাকথিত 'শ্যাডো ফ্লিট' ব্যবহার করে রপ্তানিকৃত রুশ তেল ও গ্যাসের উৎস গোপন রাখা সম্ভব, যা ট্রাম্পের নতুন শুল্ক এড়াতে সাহায্য করতে পারে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ রিচার্ড নেফিউ বলেছেন, "নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ঠিক যতটা কঠিন, ততটা কঠিন তা বজায় রাখা।"
এই সেকেন্ডারি শুল্কের কারণে ভারত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, ২০২২ সাল থেকে ভারত রাশিয়ার তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার ট্রাম্প সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "তারা যুদ্ধ চালাতে সাহায্য করছে এবং যদি এটা তারা চালিয়ে যায় তাহলে আমি খুশি হবো না।"
এই নীতি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে ভারত থেকে পণ্য আমদানির সময় শতভাগ শুল্ক দিতে হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পণ্য কেনা বন্ধ করে সস্তায় অন্য জায়গা থেকে পণ্য কিনতে বাধ্য হবে। এতে ভারতের রাজস্ব বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ভারতে তাদের আইফোন উৎপাদনের বড় অংশ স্থানান্তর করছে। বিশেষ করে যে আইফোনগুলো তারা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করবে। ফলে এই সেকেন্ডারি শুল্কের কারণে আমেরিকানরা ভারতে তৈরি আইফোনের জন্য বড় ধাক্কার সম্মুখীন হতে পারে, কারণ দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে।