আগস্ট ৬, ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম
গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রভাব অনস্বীকার্য। সেনাপ্রধানের পদে থাকা ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। তবে সম্প্রতি পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির তার পূর্বসূরিদের তুলনায় অনেক বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন, যা নতুন এক রাজনৈতিক গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে। এই গুঞ্জনটি এখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও আলোচিত হচ্ছে।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে, দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে সরিয়ে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে চান। গুঞ্জন অনুযায়ী, তার এই চাওয়া পূরণ হওয়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট এই গুঞ্জনের সত্যতা অনুসন্ধান করেছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছে ইকোনমিস্ট। কিন্তু উভয় নেতৃত্বই এই গুঞ্জনের সত্যতা নেই বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এই খবরকে 'অর্থহীন ছাইপাঁশ' বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি দ্য ইকোনমিস্টকে বলেছেন, "এসব আসলে অর্থহীন ছাইপাঁশ কথাবার্তা। সেনাপ্রধান দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান— এ তথ্যের কোনো সত্যতা নেই।"
আইএসপিআরের মহাপরিচালক আরও বলেন, "ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির কখনও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি এবং ভবিষ্যতেও তার এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী একটি বিশেষ 'ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ' মেনে চলে। দেশের জাতীয় স্বার্থের জন্যই এটা মেনে চলা হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গেও আমরা তা মেনে চলছি।"
অন্যদিকে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি এই গুঞ্জনকে 'বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, "এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং বর্তমান প্রেসিডেন্টকে অব্যাহতি দিয়ে আমরা সেনাপ্রধানকে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট করব— এ তথ্যের কোনো সত্যতা নেই।"
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এ পর্যন্ত আইয়ুব খান এবং আসিম মুনির— এই দুজন সেনাপ্রধান সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পদবি 'ফিল্ড মার্শাল' অর্জন করেছেন। ১৯৫৮ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর আইয়ুব খান নিজেই নিজেকে এই পদবি দিয়েছিলেন। কিন্তু আসিম মুনিরকে এই পদবি প্রদান করেছে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকার। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় গত মে মাসে পাকিস্তান সামরিক অভিযান 'অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস' পরিচালনা করে, তাতে সাহসিকতা ও কৃতিত্বের সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ায় আসিম মুনির 'জেনারেল' পদবি থেকে 'ফিল্ড মার্শাল' হন।
ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইতিহাসের অন্যতম চৌকস কর্মকর্তাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে বিশেষ কৃতিত্ব দেখানোর জন্য তিনি 'সোর্ড অব অনার' পেয়েছিলেন, যা একজন প্রশিক্ষণার্থী পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তার জন্য সর্বোচ্চ সম্মান। এছাড়া তিনি একই সঙ্গে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-এর মহাপরিচালকও ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।