সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

১৯ দিনে ভারতের সামনে কী কী বিকল্প?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ৯, ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম

১৯ দিনে ভারতের সামনে কী কী বিকল্প?

ছবি- সংগৃহীত

রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা আগামী ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে ভারতের মোট রফতানির ১৮% যে মার্কিন বাজারে যায়, তা বাণিজ্যিক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে ভারত সরকার এখন কী পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ভারতের হাতে আছে মাত্র ১৯ দিন।

রাশিয়া থেকে তেল কেনার জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ভারত সরকার 'অন্যায় ও অযৌক্তিক' বলে আখ্যা দিয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত বাণিজ্যিক সংকটের মুখে ভারতের হাতে আছে মাত্র ১৯ দিন। এই সময়ে দিল্লি কী কৌশল অবলম্বন করবে, তা এখন দেখার বিষয়।

জাপানি ব্রোকারেজ ফার্ম নোমুরার এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই পদক্ষেপ ভারতের বিরুদ্ধে একটি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো কাজ করবে। ভারতের মোট জিডিপির ২.২% আসে মার্কিন বাজার থেকে। ৫০% শুল্কের ফলে এই খাত থেকে রফতানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, জুয়েলারি ও অন্যান্য শ্রমনির্ভর শিল্পে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ। এতে বহু শ্রমিক কাজ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।

এই সংকট মোকাবিলায় ভারতের সামনে কয়েকটি সম্ভাব্য পথ খোলা আছে:

১. কৌশলগত সমীকরণ পরিবর্তন: দিল্লির প্রথম সারির থিংকট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) অজয় শ্রীবাস্তবের মতে, এই ঘটনা ভারতকে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে বাধ্য করবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন্ন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে পারেন।

২. রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে ছাড়: লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসের ড. চিতিজ বাজপাই মনে করেন, ভারত হয়তো রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে। ভারতের একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ নীলকান্ত মিশ্রও জানিয়েছেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে এখনকার লাভ আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমালে ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষতি তেমন হবে না।

৩. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা: ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। এ মাসের শেষ দিকেই একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল ভারত সফরে আসছে। এই আলোচনায় ভারতকে খুব কুশলী কূটনীতির পরিচয় দিতে হবে।

৪. পাল্টা শুল্ক আরোপ: ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা শশী থারুর মনে করেন, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন যেকোনো দেশের মতোই ভারতেরও মার্কিন পণ্যের ওপর সমপরিমাণ শুল্ক আরোপ করা উচিত। তবে বার্কলেস রিসার্চের এক নোটে বলা হয়েছে, ভারতের পক্ষে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম।

প্রধানমন্ত্রী মোদি ইতোমধ্যেই বলেছেন, তিনি ভারতের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করবেন না এবং দেশের কৃষকদের পাশে থাকবেন। এখন দেখার বিষয়, এই ১৯ দিনে ভারত সরকার কোন পথ বেছে নেয়।