জুলাই ২২, ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
মাইগ্রেন মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের একটি বিশেষ ধরনের রোগ, যার প্রধান উপসর্গ হলো তীব্র ও বারবার মাথাব্যথা। একবার ব্যথা শুরু হলে তা ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং সময়-সময় ফিরে আসে। মাথাব্যথার পাশাপাশি মাইগ্রেন হলে বমি ভাব, বমি, আলো ও শব্দে অতিসংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে। কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে এই ব্যথা উপশম হতে পারে এবং প্রতিরোধ করাও সম্ভব।
মাইগ্রেন থেকে উপশম পাওয়ার এবং এটিকে প্রতিরোধ করার ১১টি ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হলো:
-
প্রচুর পানি পান করুন: মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ হলো পানিশূন্যতা। এতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়, মাথায় চাপ বাড়ে এবং ব্যথা শুরু হয়। মাইগ্রেনের সময় ঘাম বা বমি হলে শরীর আরও পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে ব্যথা কমে এবং নতুন করে মাইগ্রেন প্রতিরোধ করা সম্ভব।
-
ঠান্ডা সেঁক দিন (কোল্ড কমপ্রেস): মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে কপাল, মাথার তালু বা গলায় বরফের প্যাক ব্যবহার করুন। এতে ব্যথা কমে ও আরাম মেলে। বরফ দেওয়া জেল প্যাক বা ঠান্ডা পানিতে ভেজানো একটি কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন।
-
পুদিনা তেল বা পেপারমিন্ট অয়েল: পেপারমিন্ট অয়েল বা পুদিনার তেল মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের জন্য বহুল ব্যবহৃত এসেনশিয়াল অয়েল। এতে থাকা মেনথল পেশি শিথিল করতে এবং ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। নারকেল তেলের মতো অন্য তেলের সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা করে কপালের দুই পাশে লাগালে টেনশন হেডেক ও মাইগ্রেন—দুই ধরনের ব্যথা থেকেই আরাম পাওয়া যায়। ত্বক স্পর্শকাতর হলে ব্যবহারের আগে পরীক্ষা করে নিন।
-
অন্ধকার ও শান্ত ঘরে বিশ্রাম নিন: মাইগ্রেনের সময় তীব্র আলো ও উচ্চ শব্দ মাথাব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ব্যথা শুরু হলে একা ও শান্ত কোনো ঘরে চলে যান। ঘরের জানালার পর্দা টেনে দিন, আলো কমিয়ে দিন। নিরিবিলি পরিবেশে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে মাথাব্যথা অনেকটা কমে যেতে পারে।
-
পর্যাপ্ত ঘুমান: নিয়মিত ভালো ঘুম মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে। কম বা অতিরিক্ত ঘুম—দুটোই মাথাব্যথা বাড়াতে পারে এবং ব্যথা সহ্য করার শক্তি কমিয়ে দিতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
-
আদা চা খান: আদা মাথাব্যথা, বমি ভাব ও গা গোলানো কমাতে সাহায্য করে, যা মাইগ্রেনের সাধারণ উপসর্গ। এক কাপ গরম পানিতে কয়েক টুকরা আদা দিয়ে চা বানিয়ে দিনে ১-২ বার খান। আদা–চা স্নায়ু শান্ত করে, রক্তসঞ্চালন ভালো করে এবং দ্রুত আরাম দিতে পারে।
-
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্ল্যাভিন) গ্রহণ করুন: ভিটামিন বি২–কে রিবোফ্ল্যাভিনও বলা হয়। এটি দুধ, চিজ, মাছ আর মুরগির মাংসে পাওয়া যায়। সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও খাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
-
যোগব্যায়াম ও শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন করুন: যোগব্যায়াম ও শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমায় এবং শরীরকে শান্ত করে। এতে পেশির টান কমে যায়, যা মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে মাথাব্যথার ঝুঁকিও কমে।
-
অ্যালকোহল বর্জন করুন: অনেকের অ্যালকোহল খেলে বা কিছু নির্দিষ্ট খাবার (যেমন চকলেট, অতিরিক্ত চিজ বা ক্যাফেইন) খেলে মাইগ্রেন বেড়ে যায়। তাই এসব খাবার বর্জন করা ভালো, এতে মাইগ্রেন কম হতে পারে।
-
ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবার খান: ম্যাগনেশিয়াম একধরনের খনিজ, যা গাঢ় সবুজ শাকসবজি, গোটা শস্য আর বাদামে পাওয়া যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়ার আগেই তা রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও খাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
-
আকুপ্রেশার নিন: আকুপ্রেশার একটি প্রাচীন চীনা পদ্ধতি, যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টে চাপ দিয়ে ব্যথা কমানো হয়। মাইগ্রেন উপশমে এল আই-ফোর পয়েন্ট (বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর মাঝখানে) কার্যকর। এই জায়গায় ২-৩ মিনিট আঙুল দিয়ে চাপ দিন বা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে মাথার রক্তচাপ কিছুটা স্বাভাবিক হয় এবং ব্যথা হালকা হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন: