জুলাই ২৩, ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেছেন, সরকার যদি তার কাজে কোনো ত্রুটি মনে করে, তাহলে তাকে পদত্যাগ করতে বললে তিনি চলে যাবেন। বুধবার (২৩ জুলাই, ২০২৫) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্য শিক্ষা খাতের চলমান অস্থিরতা এবং সম্প্রতি শিক্ষা সচিবের অব্যাহতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা উসকে দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। এর পরপরই শিক্ষা সচিবকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সি আর আবরার বলেন, "সেটা সরকার বিবেচনা করবে। এখানে কোনো রকমের অব্যবস্থাপনা হয়নি। আমি সেটাই বোঝাতে চেষ্টা করেছি।" তিনি আরও যোগ করেন, "শিক্ষাসচিবকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেটা উচ্চতর একটা কমিটির সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম না। তাকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সেটার উত্তর আমি দিতে পারব না।" এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে শিক্ষাসচিবের অব্যাহতি প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করেন।
সাংবাদিকদের সরাসরি প্রশ্ন ছিল, "আপনি কি পদত্যাগ করবেন?" জবাবে উপদেষ্টা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, "আপনি আমাকে জেরা করতে পারেন না।" তবে তিনি স্পষ্ট করেন যে, যদিও তার পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে, নিজে থেকে পদত্যাগ করার কোনো অভিপ্রায় তার নেই। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, "আমার কাজে কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি মনে করি না।" তিনি সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার পরম্পরা তুলে ধরে বলেন, "আপনারা সেটা বিবেচনা করবেন, সেটা ঠিক কি বেঠিক। আমারতো নিয়োগপত্রও রয়েছে।"
সি আর আবরার আরও স্পষ্ট করে বলেন, "তারা (সরকার) যদি মনে করেন আমার কাজে এখানে ব্যত্যয় ঘটেছে, তাহলে আমাকে যেতে বললে আমি চলে যাব। আমার এখানে আঁকড়ে ধরা বা নিজেকে জাস্টিফাই করার কোনো কিছু নেই।" তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে প্রস্তুত এবং ব্যক্তিগতভাবে পদ ধরে রাখার কোনো চেষ্টা তার নেই।
আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি, বিশেষ করে পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতেই শিক্ষা উপদেষ্টা এবং সচিবের পদত্যাগের দাবি ওঠে। শিক্ষাসচিবের অব্যাহতিকে অনেকে এই আন্দোলনের আংশিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তবে, শিক্ষা উপদেষ্টার এই মন্তব্য সরকারের পক্ষ থেকে তার ভূমিকা পুনর্বিবেচনার একটি ইঙ্গিত হতে পারে।
এই ঘটনা শিক্ষা প্রশাসনে আরও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জনগণের প্রত্যাশা হলো, শিক্ষা ব্যবস্থার বিদ্যমান সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান হোক এবং শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হোক।
আপনার মতামত লিখুন: