বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

চীনের জে-৩৫ যুদ্ধবিমান: মার্কিন এফ-৩৫সি’র আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম

চীনের জে-৩৫ যুদ্ধবিমান: মার্কিন এফ-৩৫সি’র আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ

ছবি- সংগৃহীত

বিশ্ব সামরিক পরাশক্তির সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করে চীনের নৌবাহিনীতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক স্টিলথ ফাইটার জে-৩৫। এই সংযোজন যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-আধিপত্যে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে দুই পরাশক্তির সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতে একতরফা পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। এতদিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই ছিল একমাত্র নৌশক্তি যারা তাদের বিমানবাহী রণতরীতে এফ-৩৫সি লাইটনিং-২ স্টিলথ ফাইটার মোতায়েন করে আসছিল। এখন চীনও সেই সমকক্ষ যুদ্ধবিমানের অধিকারী।

জে-৩৫: এক নতুন সামরিক ক্ষমতা

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি (পিএলএএন) তাদের প্রথম দুটি জে-৩৫ ক্যারিয়ারভিত্তিক স্টিলথ ফাইটার নিজেদের বহরে যুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে তারা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-স্টিলথ জেটের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। শেনইয়াং জে-৩৫ হলো চীনা একক-সিটার, টুইন-ইঞ্জিন, সর্ব-আবহাওয়া, স্টিলথ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের একটি সিরিজ, যা শেনইয়াং এয়ারক্রাফ্ট করপোরেশন তৈরি করেছে। এই বিমানটি মূলত বিমানের শ্রেষ্ঠত্ব এবং সারফেস স্ট্রাইকের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অপরদিকে, এফ-৩৫সি হলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি লকহিড মার্টিন এফ-৩৫ লাইটনিং-২ যুদ্ধবিমানের ৩টি সংস্করণের মধ্যে একটি, যা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে উন্নত প্রযুক্তি ও বহু-কার্যকারিতা সম্পন্ন। এটি মূলত নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী থেকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

উৎপাদন ও মোতায়েনের ইঙ্গিত

দ্য এশিয়ান টাইমস ও দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুতেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে চীন তাদের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-৩৫এ কার্যকর করেছে। এই খবরের সত্যতা আরও জোরালো হয়েছে দুটি জে-৩৫এ বিমানের ছবি প্রকাশের পর, যেখানে সেগুলোকে চীনের প্রথম স্টিলথ ফাইটার জেট জে-২০ এবং জে-১৬ডি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমানের সঙ্গে উড়তে দেখা গেছে। এই শক্তিশালী বিমানগুলোর উড্ডয়নের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর সামরিক পর্যবেক্ষকরা, যার মধ্যে চীনের সামরিক বিমান চলাচল গবেষক আন্দ্রেয়াস রুপ্রেখটও ছিলেন, জে-৩৫এ বিমানের আরও কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন।

রুপ্রেখট এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ছবি এবং সিরিয়াল নম্বর ৬১৮২১-এর ভিত্তিতে জে-৩৫এ পিএলএএফ-এর প্রথম এয়ার ব্রিগেডের মধ্যে উড়ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরবর্তীতে আরেকটি ছবি পোস্ট করা হয়, যেখানে বিমানটির সিরিয়াল নম্বর ছিল ৬১৮২০। পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রাক্তন প্রশিক্ষক সং ঝংপিং-এর মতে, জে-৩৫ বিমানের ছবি এবং উড়ানের বৈশিষ্ট্যগুলো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ যে এই বিমানটি উৎপাদন যুগে প্রবেশ করেছে। এটি চীনের সর্বশেষ বিমানবাহী রণতরীতে এসব মোতায়েনের জন্য কার্যকরী প্রস্তুতির দিকে এগিয়ে চলেছে, অথবা পরীক্ষামূলক ওই দুটি বিমান অপারেশনাল মুডে রয়েছে।

‘ফ্লাইং শার্ক’ প্রতীক ও ভবিষ্যতের প্রভাব

সপ্তাহান্তে চীনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে দেখা গেছে, বিমানগুলোর ফিউজলেজে স্পষ্ট “চীনা নৌবাহিনী” চিহ্ন এবং লেজে “ফ্লাইং শার্ক” প্রতীক রয়েছে। পিএলএ নৌবাহিনীতে তাদের আনুষ্ঠানিক একীভূত হওয়ার এটি সবচেয়ে শক্তিশালী দৃশ্যমান ইঙ্গিত। ফ্লাইং শার্ক প্রতীকের বিশ্লেষণ করে পিএলএ-র প্রাক্তন প্রশিক্ষক সং বলেন, ফ্লাইং শার্ক নিশ্চিত করে যে জে-৩৫ চীনের নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরীতে যোগ দিয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে বিমানটি সম্ভবত সক্রিয় সেবায় রয়েছে এবং যুদ্ধ ও লজিস্টিক সহায়তা ক্ষমতা গড়ে তুলছে।

এর মানে, অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫সি-এর একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন শেষ হতে চলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন শক্তিকে ভবিষ্যতে বড় প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে। চীন যদি ব্যাপক হারে এই বিমান উৎপাদনে সক্ষম হয়, তাহলে দেশটির মিত্রদেরও জে-৩৫ হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, যা মার্কিনিদের জন্য আরও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এই ঘটনা বিশ্ব সামরিক ভূ-রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।