বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

দীর্ঘ ৫ বছর পর চীনা পর্যটকদের জন্য ভারতের ভিসা চালু:

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

দীর্ঘ ৫ বছর পর চীনা পর্যটকদের জন্য ভারতের ভিসা চালু:

ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর অবশেষে চীনা নাগরিকদের জন্য পর্যটন ভিসা দেওয়া শুরু করল ভারত। বেইজিংয়ে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া চালু হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, এই পদক্ষেপ ভারত-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা সীমান্ত উত্তেজনাকে ছাপিয়ে কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চলতি বছরের মার্চ মাস থেকেই চীনা কর্তৃপক্ষ ভারতীয় পর্যটকদের জন্য ভিসা চালু করেছিল। এর ধারাবাহিকতায় ভারতের এই পাল্টা পদক্ষেপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভারসাম্য আনার একটি প্রয়াস। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের এই সিদ্ধান্তকে ‘ইতিবাচক’ বলে মন্তব্য করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পৃথক দুটি সরকারি সফরে চীন গিয়েছিলেন। এই সফরগুলোয় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়, যার পরপরই ভারত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল। কূটনৈতিক মহলে এই সফরগুলোকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০২০ সালের এপ্রিলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় চীনা সেনার অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় চীনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনাসদস্যের প্রাণহানি ঘটে। এই ঘটনার পর থেকেই ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন তীব্র হয়। সূত্র জানায়, ভারত তখন চীনা বিনিয়োগের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, জনপ্রিয় চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধকরণ এবং পারস্পরিক ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আরোপের মতো একাধিক পদক্ষেপ নেয়। সেই সময়ে চীনও কোভিড-১৯ মহামারির অজুহাত দেখিয়ে ভারতসহ বহু দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

২০২২ সালে চীন যদিও তাদের কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করে, তবে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় অনুমতি না পাওয়ায় নিয়মিত ক্লাসে যোগ দিতে পারছিল না। ভারত বারবার এ বিষয়ে উদ্বেগ জানালেও চীন তাতে সাড়া দেয়নি। ফলস্বরূপ, ভারতও চীনা পর্যটকদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল, যা একটি কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, এই ভিসা চালু করার সিদ্ধান্ত কেবল পর্যটন খাতের জন্য নয়, বরং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্যও একটি ইতিবাচক সংকেত। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে দুই দেশই এখন সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। এটি ভবিষ্যতে বাণিজ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ খুলে দিতে পারে। ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের পূর্বে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চীনা পর্যটক ভারত ভ্রমণ করতেন, যা ভারতের পর্যটন অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলত। একইভাবে, বহু ভারতীয় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী চীনে যাতায়াত করতেন। এই ভিসা চালুর ফলে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে, যা ভুল বোঝাবুঝি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং কূটনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে অবশেষে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। দুই দেশই ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগী হচ্ছে, এবং তারই এক বড় নিদর্শন হিসেবে ভারতের তরফে এবার চীনা পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা চালুর ঘোষণা এল। এটি একটি সুচিন্তিত ও ফলপ্রসূ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিতে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।