বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

বাংলাদেশ-পাকিস্তান অন অ্যারাইভাল ভিসা চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে:

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৭:৪৯ পিএম

বাংলাদেশ-পাকিস্তান অন অ্যারাইভাল ভিসা চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে:

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনীতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই, ২০২৫) পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নাকভির সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই তথ্য জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্র

বৈঠকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে।" এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্কের ইঙ্গিত দেন।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নাকভি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি জোর দেন যে, সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, "আমরা সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। সেখানে আমরা ব্যর্থ হলে তা পাকিস্তানসহ সবার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সে জন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে।"

মাদক সমস্যা: আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ ও পারস্পরিক অভিজ্ঞতা

বৈঠকে উভয় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদক সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তাদের দ্বিতীয় প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাদক, যা পার্শ্ববর্তী দেশ আফগানিস্তান থেকে পাচারের মাধ্যমে আসছে। এর জবাবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "বাংলাদেশেরও অন্যতম প্রধান সমস্যা মাদক, যা আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে সাধারণত পাচার হয়ে থাকে।"

উভয় দেশই মাদক সমস্যা দূর করতে পারস্পরিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মত প্রকাশ করেন। এই পারস্পরিক বোঝাপড়া আঞ্চলিক মাদক চোরাচালান রোধে সহায়ক হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

পুলিশ প্রশিক্ষণ ও রোহিঙ্গা ইস্যু

বৈঠকে পুলিশ প্রশিক্ষণে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টিও উঠে আসে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নাকভি বলেন, পুলিশ প্রশিক্ষণে দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে এবং এ বিষয়ে দুই দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। তার এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশের সারদা পুলিশ একাডেমি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুলিশ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।" এটি দুই দেশের মধ্যে পুলিশ প্রশিক্ষণে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি বড় সুযোগ তৈরি করবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিচ্ছেন না, তবে পাসপোর্ট দিচ্ছেন। তবে এই পাসপোর্টগুলো ভিন্ন কোড বা সিরিয়াল নম্বরের হয়, যাতে তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা যায়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আমরা মানবতার খাতিরে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি, যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বোঝা।" তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করেন।

বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা এবং সম্পর্ক জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।