বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে

ছবি- সংগৃহীত

তুমুল প্রতিযোগিতার এই যুগে মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কাজের চাপ থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে কেউ প্রকৃতির কোলে সময় কাটান, কেউ বাড়িতেই করেন ধ্যান বা যোগব্যায়াম। এমন চেষ্টা নিঃসন্দেহেই ইতিবাচক। তবে মনের চাপ কমাতে এসবের বাইরেও আরেকটি বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন, তা হলো খাদ্যাভ্যাস

আমাদের মন ভালো রাখার জন্য যেসব হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটারের প্রভাব রয়েছে, তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো সেরোটোনিন। এই সেরোটোনিনের সিংহভাগই আসে আমাদের পরিপাকতন্ত্র থেকে। মস্তিষ্কের সঙ্গেও পরিপাকতন্ত্রের একটি যোগাযোগ আছে, যাকে বলা হয় গাট-ব্রেন অ্যাক্সিস। অর্থাৎ, খাবারদাবারের সঙ্গে মনের দিকটা বেশ জোরালোভাবেই সম্পর্কিত। এমনটাই জানালেন শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ

আধুনিক জীবনে এমন অনেক খাবারই আমরা খাই, যার কারণে মানসিক চাপ বাড়ে। এই বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক কী খেলে মনের চাপ বাড়ে এবং কিসেই-বা কমে:

যেসব খাবার মানসিক চাপ বাড়াতে পারে:

  • ফাস্ট ফুড: বার্গার, স্যান্ডউইচ, প্যাটিস, হটডগ বা এ-জাতীয় খাবার দ্রুত খেয়ে নেওয়া যায় ঠিকই, তবে এ ধরনের খাবারের কারণে আমাদের অন্ত্রে থাকা উপকারী জীবাণুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া এসব খাবারে প্রদাহের ঝুঁকিও বাড়ে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের স্নায়ুতে এবং বাড়ে মানসিক চাপ।

  • কোমল পানীয়: প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ঠান্ডা কোমল পানীয় সাময়িকভাবে আরামদায়ক মনে হলেও, এ ধরনের পানীয় মনের জন্য ভালো নয়। এগুলোতে প্রদাহ বাড়ে, আর তাতেই বাড়তে পারে মানসিক চাপ।

  • মিষ্টি খাবার: কেক, পেস্ট্রি, আইসক্রিম, ডোনাট, ফালুদা কিংবা যেকোনো মিষ্টি খাবারই খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। মন খারাপ থাকলে অনেকে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলেও, অতিমাত্রায় এসব খাবার খেলে প্রদাহের ঝুঁকি ও মানসিক চাপ দুটোই বাড়ে। তাই মিষ্টি পছন্দ করলেও খেতে হবে বুঝেশুনে।

  • বাসি তেলের রান্না: অনেক বাড়িতে ও রেস্তোরাঁয় খরচ বাঁচাতে রান্নার জন্য বাসি তেল ব্যবহার করা হয় দিনের পর দিন। অথচ বাসি তেলে এমন পদার্থ থাকে, যা আমাদের জন্য বিষাক্ত। এই বিষাক্ত উপকরণের প্রভাবেও বাড়ে মানসিক চাপ।

  • পরিশোধিত খাবার ও প্রক্রিয়াজাত মাংস: রিফাইনড বা পরিশোধিত খাদ্য উপকরণ (যেমন মসৃণ চাল, আটা, ময়দা) এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস এখন বহুল জনপ্রিয়। এসব খাবারেও প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত এসব খাবার খাওয়ার কারণে বাড়তে পারে মানসিক চাপ।

  • রাসায়নিকমিশ্রিত খাবার: ফল পাকানোর জন্য মেশানো রাসায়নিক কিংবা শাকসবজিতে মিশে থাকা কীটনাশকও বিষাক্ত। খাবারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ যেমন অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ, তেমনি এসবের প্রভাবে মনের চাপও বাড়ে।

  • অ্যালকোহল: অ্যালকোহল–জাতীয় পানীয় গ্রহণেও প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে। এটি মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 

মনের যত্নে যা খাবেন:

মনের যত্ন নিতে কিছু স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। যেমন:

  • টক দই: এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, যা সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়ক।

  • আঁশসমৃদ্ধ খাবার: গোটা শস্যের তৈরি খাবার যেমন লাল চাল, লাল আটা, ছোলা, ওটমিল মনের জন্য উপকারী।

  • ডার্ক চকলেট: এটি মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

  • তাজা শাকসবজি ও মৌসুমি ফলমূল: সবজি খুব বেশি রান্না না করে হালকা ধাঁচের রান্না (যেমন সাঁতলানো বা সঁতে করা) বা সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। সালাদে খানিকটা জলপাই তেল যোগ করতে পারেন।

  • বাদাম ও তিসি: এগুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী চর্বি সরবরাহ করে।

  • গ্রিন টি: এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

  • কিমচি: এটি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।