বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

বিয়ের ৮ বছর পর ৩ সন্তানের জন্ম, দিনমজুর বাবার দুশ্চিন্তা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ০২:১৭ পিএম

বিয়ের ৮ বছর পর ৩ সন্তানের জন্ম, দিনমজুর বাবার দুশ্চিন্তা

ছবি- সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সুমাইয়া খাতুন (৩০) নামের এক নারী একসঙ্গে তিন সন্তান প্রসব করেছেন। শনিবার (১৯ জুলাই, ২০২৫) এই ঘটনায় একটি ছেলে ও দুটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়েছে। মা ও নবজাতক তিন সন্তানই সুস্থ আছে বলে জানা গেছে, যা পরিবারের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের বন্যা নিয়ে এসেছে। তবে এই খুশির পাশাপাশি আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দিনমজুর বাবা শামীম হোসেনের। বিয়ের আট বছর পর এই তিন সন্তানের আগমন তাদের জীবনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।


চুয়াডাঙ্গা শহরের নারজিতা ক্লিনিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন সিজারিয়ানের মাধ্যমে সুমাইয়া খাতুনের এই তিন সন্তানের জন্ম দেন। এই ধরনের ঘটনা বিরল এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির একটি উদাহরণ।

সুমাইয়া খাতুন মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের দিনমজুর শামীম হোসেনের স্ত্রী। সুমাইয়া খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর তার নানি বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামে বড় হয়েছেন। বর্তমানে তিনি তার তিন সন্তানকে নিয়ে নানি বাড়িতে মামাদের তত্ত্বাবধানে আছেন।

 

বাবা শামীম হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায় তার দুশ্চিন্তার কারণ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, "আমি একজন দিনমজুর। বিয়ের আট বছর পর তিন সন্তানের মুখ দেখে যতটা খুশি হয়েছি, ঠিক ততটাই চিন্তিত। সংসার চালাতেই আমি হিমশিম খাচ্ছি। তিন সন্তান মানুষ করতে বিপাকে পড়তে হতে পারে।" শামীম হোসেনের এই বক্তব্য তার অসহায়ত্বকে তুলে ধরে। তিনি আরও জানান, মায়ের বুকের দুধ হচ্ছে না, তাই শিশুদের কেনা দুধ খাওয়াতে হচ্ছে, যা আর্থিকভাবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ক্লিনিকের বিল, স্ত্রীর ওষুধের খরচসহ যাবতীয় অনেক খরচ হয়েছে। তিনি সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেলে তা তাদের জন্য অনেক উপকারি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

 

মা সুমাইয়া খাতুনও একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "খুব ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর নানি বাড়িতে বড় হয়েছি। এখন তিন সন্তান নিয়ে এখানেই আছি। কেনা দুধ খাওয়াতে হচ্ছে। গতকাল এক কৌটা দুধ কিনেছি, আজকে শেষ হয়েছে। যা তিন সন্তানের জন্য ব্যয়বহুল। মামাদের আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো না। আবার বাচ্চাদের বাবাও দিনমজুর, একদিন কাজে না করলে সংসার চলে না।" তিনি সমাজের বিত্তবান এবং সরকারি সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

এদিকে, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তিথি মিত্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, "আমি বিষয়টি জেনেছি। আবেদন করলে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।" এছাড়া, তিনি প্রাথমিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের এই আশ্বাস পরিবারটির জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে যদি এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হয়, তবে নতুন জন্ম নেওয়া তিনটি শিশুর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।