জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম
পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী তরুণ জহিরুল। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। গত ৩০ জুন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান জহিরুল। মৃত্যুর ২৩ দিন পর তার কফিনবন্দি মরদেহ পরিবারে ফিরেছে, যা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা বৈরাগী বাড়ির হতদরিদ্র পরিবারটিতে গভীর শোকের ছায়া নামিয়েছে।
জহিরুল ছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা বৈরাগী বাড়ির এলাকার আব্দুল লতিফের ভাড়াটিয়া রশিদ মৃধার ছেলে। বুধবার (২৩ জুলাই, ২০২৫) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জহিরুলের লাশসহ কফিন বুঝে নেয় তার পরিবার। এই হৃদয়বিদারক মুহূর্তে পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, যিনি মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া সহজ করেছেন।
নিহত জহিরুলের বাবা আব্দুর রশিদ মৃধা ঢাকা পোস্টকে জানান তার কষ্টের কথা। তিনি বলেন, "দালালদের প্রলোভনে পড়ে সম্পদ বিক্রি করে ঋণ নিয়ে সাড়ে সাত লাখ টাকা খরচ করে আদরের সন্তান জহিরুলকে সৌদি আরব পাঠিয়েছিলাম। দালালরা বলছিল, সৌদিতে ভালো কাজ করতে পারবে। বেতন বেশি, যে টাকা খরচ করে যাবে তা বেশিদিন লাগবে না উঠাতে।" তবে সৌদিতে যাওয়ার পর রশিদ মৃধা জানতে পারেন যে, দালালরা জহিরুলকে অবৈধভাবে নিয়ে গেছে এবং সে সৌদি আরবে থাকা বা কাজ করার কোনো অনুমতি পাবে না। এই খবর শুনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, সৌদিতে যাওয়ার কিছুদিন পর জহিরুল ফোন করে জানায়, সে দেশের লোকজন পেয়েছে এবং পালিয়ে থেকে মরুভূমিতে কাজ করতে পারবে। তবে থাকা ও কাজ করার অনুমতি নিতে হলে সৌদিতে দালালদের তিন লাখ টাকা দিতে হবে। জহিরুল বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতো, "আব্বা বেশি দিন লাগবে না টাকা পাঠাবো, একটু কষ্ট করে ধৈর্য ধরেন।"
রশিদ মৃধা তার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, "ছেলেকে তো হারালাম না নিজেই মরলাম। ছেলের লাশটিও হারালাম। কারণ সৌদিতে অবৈধভাবে থাকার কারণে মরদেহ দেশে আনা সম্ভব নয় বলেই জানি।" তবে মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতির সহযোগিতায় শেষ বারের মতো ছেলের মুখটা দেখার সুযোগ পেয়েছেন বলে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রীতি সরকারের কাছ থেকে দাফনের জন্য নগদ অনুদানও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
এই ঘটনাটি বিদেশে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের প্রতি দালালদের প্রতারণা এবং আইনি জটিলতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। জহিরুলের করুণ পরিণতি বিদেশে কর্মসংস্থান প্রত্যাশী অনেক পরিবারকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
আপনার মতামত লিখুন: