বেতন-ভাতা ফেরত দিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বললেন হাসনাত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে 'ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বজনপ্রীতির বড় উদাহরণ' আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। বুধবার (২৩ জুলাই, ২০২৫) চাঁদপুরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা উপলক্ষ্যে এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। হাসনাতের এই অভিযোগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যকারিতা এবং উপদেষ্টার যোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

হাসনাত আবদুল্লাহ তার বক্তব্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, "আমাদের একজন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আছে, আপনারা তাকে চেনেন? উনি ড. ইউনূসের ভাই-ব্রাদার কোটায় এসেছেন। তার স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।" তিনি আরও যোগ করেন, "সব সময় বলে আসছি এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো প্রয়োজন নাই। আপনারা উনার কোনো একটিভিটি দেখেছেন? তিনি যে বেতন নেন তা হারাম হবে। তিনি সরকারি টাকায় যে গাড়িতে চড়েন তা জনগণের সঙ্গে বেইমানি। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কোনো কাজের না।"

এনসিপি নেতা প্রশ্ন তোলেন, এই উপদেষ্টা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বা চিকিৎসা বোঝেন না। তার একমাত্র যোগ্যতা হলো তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলেন এবং ড. ইউনূসের খুব কাছের মানুষ। হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, "এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে যে বেতন ভাতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে তার অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।" এই বক্তব্য সরাসরি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং তার প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনা প্রসঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন, "যে বাংলাদেশে আকাশ থেকে বিমান ভেঙে পড়ে, ভবন ভেঙে পড়ে, আমরা সেই রকম বাংলাদেশ চাই না।" তিনি পূর্ববর্তী সরকারের আমলে দুর্নীতির তদন্তেরও দাবি জানান। তার ভাষ্যমতে, "হাসিনার আমলে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে, পূর্বের সেই দুর্নীতিগুলোর তদন্ত করা উচিত। এই বিমানগুলো হাসিনার আমলে কেনা, সেই সময় হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। আমরা বিমান বাহিনীর ভাইদের নিরাপত্তা চাই। আপনাদের নিরাপত্তার যেসব সরঞ্জাম রয়েছে এসব সঠিক কিনা, ঝুঁকিমুক্ত কিনা আপনাদের বিবেচনা করতে হবে।"

রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "দল-মত নির্বিশেষে আমাদের ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে অংশ নিতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। আমরা শোকাহত। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি এই লাশের ওপর দিয়ে আবার ফেরার চেষ্টা করে আমরা শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে প্রতিহত করব।"

এসময় সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। এনসিপির এই সমাবেশ এবং নেতার বক্তব্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যকারিতা, স্বাস্থ্য খাত এবং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।