জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৩:০২ পিএম
সম্প্রতি দেশে আগুন পোড়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দুর্ঘটনা এবং প্রসূতি মায়েদের জন্য রক্তের প্রয়োজনীয়তা প্রায়শই দেখা যায়। তবে, অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণার কারণে অনেকে রক্তদানে অনীহা প্রকাশ করেন। এই পরিস্থিতিতে, ইসলাম রক্তদানকে শর্তসাপেক্ষে সম্পূর্ণ বৈধ এবং ক্ষেত্রবিশেষে ইবাদত হিসেবে গণ্য করেছে, যা মানুষের জীবন রক্ষায় অপরিহার্য মানবিক সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী, মানুষের জীবন বাঁচাতে কোনো রকম বিনিময় ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রক্তদান করা একটি মহৎ কাজ এবং ইবাদত। যদি কেউ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এই ইবাদত করতে পারে, তাহলে সে মহান আল্লাহর কাছে এর উত্তম প্রতিদান পাবে। পবিত্র কোরআনে সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, "আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো।" এই আয়াত মানব জীবন রক্ষার গুরুত্বকে অসামান্যভাবে তুলে ধরেছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) রক্তদানের মানবিক দিককে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "মানুষ যতক্ষণ অন্য মানুষের সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন।" (সহিহ মুসলিম: ৬৭৪৬)। এছাড়াও, রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে অন্যের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করে দেবেন।" (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৩)। এই হাদিসগুলো রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের উপকার করার প্রতি ইসলামে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করে।
আমাদের সমাজে কিছু মানুষের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যে, রক্ত দিলে নিজের শরীরে অনেক ঘাটতি হয়। তবে, এই ধারণাটি সঠিক নয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং বিশেষজ্ঞ ফকিহদের মতে, যেকোনো সুস্থ-সবল মানুষ রক্তদান করলে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না, বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি শারীরিক উপকারও বয়ে আনে।
ফকিহগণ কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে রক্তদানকে বৈধ সাব্যস্ত করেছেন:
-
জীবননাশের আশঙ্কা: যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তির জীবননাশের আশঙ্কা হয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে তার শরীরে অন্যের রক্ত প্রবেশ করানো ছাড়া বাঁচানোর অন্য কোনো পন্থা না থাকে, তখন রক্তদান বৈধ।
-
জীবনের ঝুঁকি বা রোগমুক্তি বিলম্বিত হওয়া: যখন অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা নেই, কিন্তু রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবনের ঝুঁকি বাড়ে অথবা রোগমুক্তি বিলম্বিত হয়, এই দুই অবস্থায়ও রক্তদান জায়েজ।
-
অপ্রয়োজনীয় রক্তদান পরিহার: যখন রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন দেখা না দেয় বরং রক্ত না দেওয়ার অবকাশ থাকে, তখন রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
-
শক্তি বৃদ্ধি ও সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্য পরিহার: যখন জীবননাশের এবং অসুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা না হয়, বরং শুধু শক্তি বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্য হয়, সে অবস্থায় ইসলামি শরিয়তে রক্তদান জায়েজ নয়।
অতএব, একজন মুমিনের উচিত, একান্ত আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করা। আল্লাহ তায়ালা যেন সবাইকে অন্যের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার এবং রক্তদানের মতো মহৎ কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দান করেন।
আপনার মতামত লিখুন: