বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

জীবন রক্ষাকারীর প্রশংসা কোরআনে যা বলা হয়েছে এক প্রাণের মূল্য

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম

জীবন রক্ষাকারীর প্রশংসা কোরআনে যা বলা হয়েছে এক প্রাণের মূল্য

ছবি- সংগৃহীত

বর্তমান সমাজে যখন খুন, রাহাজানি এবং হত্যাকাণ্ড নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হচ্ছে, তখন পবিত্র কোরআন অন্যের জীবন রক্ষার গুরুত্ব ও মহত্ত্বকে তুলে ধরে এক অনন্য বার্তা প্রদান করেছে। তুচ্ছ স্বার্থ বা সামান্য দ্বন্দ্বে নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা যেখানে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে ইসলাম অন্যের প্রাণ বাঁচানোকে সর্বোচ্চ মানবিক গুণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করাকে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার শামিল বলা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করাকে সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচানোর সমতুল্য ঘোষণা করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে অন্যের জীবন রক্ষাকারীর প্রশংসা করেছেন। সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে এর গুরুত্ব বর্ণনা করে বলা হয়েছে:

مِنۡ اَجۡلِ ذٰلِكَ ۚۛؔ كَتَبۡنَا عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اَنَّهٗ مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاهَا فَفَكَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ لَقَدۡ جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا بِالۡبَیِّنٰتِ ۫ ثُمَّ اِنَّ كَثِیۡرًا مِّنۡهُمۡ بَعۡدَ ذٰلِكَ فِی الۡاَرۡضِ لَمُسۡرِفُوۡ

অর্থ: "এ কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের উপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর যমীনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।" (সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩২)
 

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ভাবে হত্যাকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন এবং জীবন রক্ষার গুরুত্বকে সর্বজনীন কল্যাণের মাপকাঠিতে স্থাপন করেছেন। এর ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, কাউকে জীবিত করার অর্থ হলো, আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম ঘোষণা করেছেন, সে ধরনের কোনো মানুষকে হত্যা না করা। এতে করে সে যেন সবাইকে জীবিত রাখল। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হারাম মনে করে, তার থেকে সমস্ত মানুষ জীবিত থাকতে সমর্থ হলো।

ইসলামে শুধু জীবন রক্ষা নয়, অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করার মহৎ কাজকেও অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসে এই আত্মত্যাগের এক বিশেষ মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। সাঈদ ইবনে জায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি নিজ মাল রক্ষার্থে যুদ্ধ করে মারা যায়, সে শহীদ। আর যে ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায়, সেও শহীদ। আর যে ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষা করার জন্য নিহত হয়, সেও শহীদ। এবং যে নিজ প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সেও শহীদ।" (নাসায়ি, হাদিস: ৪০৯৫)

 

এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করা ইসলামের দৃষ্টিতে এক মহৎ গুণ, যা শহীদের মর্যাদার সমতুল্য।

ইসলামের এই শিক্ষা বর্তমান সমাজে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যেখানে ব্যক্তি স্বার্থ ও হানাহানি বাড়ছে, সেখানে এই আয়াত ও হাদিসগুলো মানুষকে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে, অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে এবং জীবন রক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করতে উৎসাহিত করে। সম্প্রতি উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরীর মতো যারা শিশুদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ এই ধর্মীয় শিক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলাম মানুষকে শুধু ধার্মিক হওয়ার আহ্বান জানায় না, বরং মানবিক মূল্যবোধকে ধারণ করে একটি শান্তিময় ও নিরাপদ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতেও উদ্বুদ্ধ করে।