বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

মেয়ের কফিনে চুমু দিয়ে শেষবিদায় দিলেন বাবা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম

মেয়ের কফিনে চুমু দিয়ে শেষবিদায় দিলেন বাবা

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছে ৯ বছর বয়সী মেহেনাজ আফরি হুমায়রা। বাবার কপালে প্রতিদিন চুমু দিয়ে ক্লাসে যাওয়া এই তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আর কখনো বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবে না। আজ মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানিপাড়া গ্রামের বাড়িতে মেহেনাজকে চিরবিদায় জানানোর আগে বাবা দেলোয়ার হোসাইন কফিনে বারবার চুমু খাচ্ছিলেন, যা এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা করে।

মেহেনাজ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার বাবা দেলোয়ার হোসাইন একই প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। সৌভাগ্যক্রমে, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার প্রাণে বেঁচে গেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার পর মেহেনাজের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিকেলের দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) বাবা দেলোয়ার হোসাইন মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। মেহেনাজের মৃত্যুর খবরটি বিকেলেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামের বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করেন। রাত দুইটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে মেহেনাজের লাশ গ্রামের বাড়িতে আসে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে রাতের আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। সবার প্রিয় মেহেনাজের মৃত্যু যেন এলাকাবাসী মেনে নিতে পারছেন না।

উপজেলার হতেয়া গ্রামের আবদুল বাছেদের ছেলে দেলোয়ার হোসাইন ১৫ বছর আগে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১১ বছর আগে টাঙ্গাইলের মেয়ে সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মেহেনাজ আফরি হুমায়রা বাবার স্কুলেই পড়ত।

দেলোয়ার হোসাইন বলেন, "মেহেনাজের ছুটি হয়েছিল। তাকে বলেছিলাম, অপেক্ষা করো, তোমার মা নিতে আসবে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, আমার স্ত্রী (সুমি) শ্রেণিকক্ষের কাছে যাওয়ার আগেই ওর সামনে দিয়ে বিমানটি আমার মেয়ের শ্রেণিকক্ষের ভেতর ঢুকে পড়ে। সব ঘটনা আমার স্ত্রীর চোখের সামনেই ঘটেছে। তাঁকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব।" তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন করেন, কোটি লোকের বাসস্থান ঢাকা শহরের ভেতরে কেন বিমানের প্রশিক্ষণ হয়?

গত কোরবানির ঈদের ছুটিতে মেহেনাজ তার মা–বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। দাদা-দাদির সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছিল সে। নাতনির সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না দাদা আবদুল বাছেদ। দাদার বুকফাটা আর্তনাদে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তিনি শুধু বলছিলেন, "আমার দাদু আর কোনো দিন আসবে না। আর আমাকে দাদু বলে ডাকবে না!"

আজ সকাল ৯টায় হতেয়া গাবলের বাজারে মেহেনাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।