বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক: একদিনে ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৪৪ নতুন রোগী

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম

ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক: একদিনে ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৪৪ নতুন রোগী

ছবি- সংগৃহীত

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক মোড় নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৪৪ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এবং এই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই, ২০২৫) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এই পরিসংখ্যান চলমান ডেঙ্গু মৌসুমের তীব্রতা এবং জনস্বাস্থ্যে এর প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত তথ্যানুসারে, নতুন করে ভর্তি হওয়া ৪৪৪ জন রোগীর মধ্যে দেশের বিভিন্ন বিভাগে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি দেখা গেছে:

  • বরিশাল বিভাগে ১২৭ জন

  • চট্টগ্রাম বিভাগে ৫১ জন

  • ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৬৮ জন

  • ঢাকা উত্তর সিটিতে ৪০ জন

  • ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮১ জন

  • খুলনা বিভাগে ৩৩ জন

  • ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ জন

  • রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন

  • রংপুর বিভাগে ৫ জন

  • সিলেট বিভাগে ২ জন

এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয় যে, ডেঙ্গু এখন আর কেবল ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, বরং এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষ করে বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে এর প্রকোপ বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪০২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন, যা কিছুটা স্বস্তির খবর। এ নিয়ে চলতি বছর মোট ১৬ হাজার ৬২৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তবে, উদ্বেগের বিষয় হলো, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ১৮ হাজার ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এবং দুঃখজনকভাবে, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং এতে মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারও আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হন মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এই তুলনামূলক চিত্র ইঙ্গিত করে যে, যদিও বর্তমান বছরের আক্রান্তের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো অতটা ব্যাপক না হলেও, মৃত্যুহার এখনও একটি বড় উদ্বেগের কারণ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। এডিস মশার প্রজনন রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বাসাবাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা, মশারী ব্যবহার করা, এবং ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে মশা নিধনে তাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারণারও প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।