বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

একসঙ্গে খেলতো, কবরেও পাশাপাশি

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ১০:২০ পিএম

একসঙ্গে খেলতো, কবরেও পাশাপাশি

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আরিয়ান, বাপ্পি ও উমায়ের—এই তিন শিশু প্রতিদিনের মতোই সোমবার সকালে একসঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থীরা কোচিং ক্লাস শেষে ঘরে ফেরার অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু এবারের ফেরাটা ছিল নিথর দেহ হয়ে। দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ এলাকায় একই বংশের সদস্য হিসেবে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা এই শিশুরা, একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে এখন কবরেও শুয়ে আছে পাশাপাশি। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা পুরো এলাকায় শোকের আবহ তৈরি করেছে।

দু’দিন আগেও যে আঙিনায় আরিয়ান (১০), বাপ্পি (৯) ও উমায়ের (৯) একসঙ্গে খেলাধুলায় মেতে থাকতো, সেখানেই আজ তারা পাশাপাশি কবরে শায়িত। মঙ্গলবার (২২ জুলাই, ২০২৫) সরেজমিন পরিদর্শনে তারারটেক মসজিদ সংলগ্ন এলাকার এই মর্মান্তিক দৃশ্য চোখে পড়ে। চোখের জলে পরিবারের কনিষ্ঠ তিন সদস্যকে বিদায় জানিয়েছে স্বজনেরা। তাদের বন্ধু, সহপাঠী এবং প্রতিবেশীরাও অঝোরে কেঁদেছেন, বলছেন এই বিদায় কষ্টের এবং মেনে নেওয়ার মতো নয়।

সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা হলেও কাছাকাছি বয়স হওয়ায় আরিয়ান, বাপ্পি ও উমায়ের ছিল একে অপরের বন্ধু, সহপাঠী এবং খেলার সাথী। আরিয়ান ছিল মোহাম্মদ আবু শাহিনের চাচাতো ভাই এবং চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। বাপ্পি ছিল আবু শাহিনের ছেলে এবং তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। একই ক্লাসের উমায়ের ছিল শাহিনের ভাইয়ের ছেলে। তারা আলাদা তিনটি বাড়িতে থাকলেও একই পরিবারের সদস্য ছিল এবং তাদের মধ্যে ছিল গভীর সখ্য।

ঘটনার দিন সকালে প্রতিদিনের মতো একসঙ্গেই স্কুলে গিয়েছিল এই তিনজন। সকাল ১১টায় স্কুল শেষে তারা কোচিংয়ের ক্লাসে অংশ নেয়, যা দুপুর দেড়টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেদিন জোহরের নামাজ শেষে শাহিন তার ছেলে বাপ্পিকে আনতে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। তার ভাই আরিয়ান ও ভাতিজা উমায়েরও একসঙ্গে ফেরার কথা ছিল।

কিন্তু পথেই তিনি শুনতে পান বিকট আওয়াজ। কিছুটা এগোতেই ধোঁয়ার কুণ্ডুলী দেখে দৌড়ে পৌঁছান স্কুল প্রাঙ্গণে। শাহিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমার ছেলে যে ক্লাসে পড়ে তার আগের ক্লাসটায় বিমানডা ঢুকছে। দেখে তখনি বুঝছি যে আমার ছেলে আর নাই।" এই কথায় তার অসহায়ত্ব ও মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু হারানোর তীব্র বেদনা প্রকাশ পায়।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে বাপ্পি ও আরিয়ানকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। শাহিন জানান, "গত রাত তিনটা বাজে হাসপাতালে আমার ভাইটা (আরিয়ান) মারা গেছে। আমার ছেলে বাপ্পি মারা গেছে সবার পরে।" উমায়েরের মৃত্যু হয় আরও কিছুক্ষণ আগে।