মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বাগেরহাটে শোকের মাতম: ৯ বছরেই ঝরে গেল শিশু ফাতেমার প্রাণ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম

বাগেরহাটে শোকের মাতম: ৯ বছরেই ঝরে গেল শিশু ফাতেমার প্রাণ

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার (৯)-এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিজ গ্রাম বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের কুনিয়া গ্রামে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ফাতেমার এই আকস্মিক ও মর্মান্তিক প্রয়াণে পুরো গ্রাম জুড়ে চলছে শোকের মাতম, স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

ফাতেমার মরদেহ ভোররাতে গ্রামে পৌঁছানোর পর এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ফাতেমাকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য গ্রামের মানুষ, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন। কুয়েত প্রবাসী বনি আমিন ও গৃহবধূ রুপা দম্পতির বড় মেয়ে ছিল ফাতেমা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। মায়ের সঙ্গে সে ঢাকাতেই বসবাস করত। পরিবারের আশা ও স্বপ্ন ছিল এই ছোট্ট ফাতেমাকে ঘিরে। তার অকাল মৃত্যুতে সেই স্বপ্নগুলোও যেন নিভে গেল।

ফাতেমার চাচা সৈয়দ নোমান হোসেন জানান, দুর্ঘটনার সময় তিনি মাইলস্টোন স্কুলের কাছেই ছিলেন। খবর শুনে অন্যদের সঙ্গে তিনিও উদ্ধার কাজে অংশ নেন। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না যে তার নিজের ভাতিজি এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। পরে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ শনাক্ত করেন এবং সকালেই গ্রামে এনে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

ফাতেমার চাচি মুক্তি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "সকালেই মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পুরো গ্রাম আজ স্তব্ধ। ছোট্ট একটি প্রাণ এভাবে ঝরে যাবে, কেউ ভাবেনি। ওর বাবা-মা কথা বলতেও পারছেন না। এই শোক কখনোই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।"

উল্লেখ্য, গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ২৬ জন শিশুসহ মোট ২৭ জন নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফাতেমা ছিল সেই হতভাগ্য শিশুদেরই একজন, যাদের জীবন অকালে ঝরে গেল। দুর্ঘটনার কারণ জানতে ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফাতেমার মতো নিরপরাধ শিশুদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু দেশের মানুষকে শোকাহত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিকে আরও জোরালো করেছে।

বিমান বিধ্বস্তের এই ঘটনায় সারাদেশেই এক গভীর শোকের আবহ বিরাজ করছে। ফাতেমার পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জন হারিয়ে শোকে মুহ্যমান। এই ট্র্যাজেডি দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছে এবং বিমান চলাচল ও নগর উন্নয়নের নিরাপত্তা বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে নতুন করে ভাববার অবকাশ তৈরি করেছে।