জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের সঙ্গে তুলনীয়। জামাতের মাধ্যমে নামাজ আদায় মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য ও শৃঙ্খলাবোধ তৈরি করে। তবে, অনেক সময় জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে গিয়ে আমরা কিছু সাধারণ ভুল করে থাকি। নিচে তেমনই ১০টি বিষয় তুলে ধরা হলো, যা নামাজকে ত্রুটিপূর্ণ করতে পারে এবং যার সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি:
-
১. কাতার সোজা না করা: জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো কাতার সোজা করে দাঁড়ানো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতার সোজা করে দাঁড়াবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও মতভিন্নতা সৃষ্টি করে দেবেন।” (বুখারি, হাদিস: ৭১৭)। নিয়ম হলো—মসজিদে কাতারের জন্য যে দাগ দেওয়া থাকে, তাতে পায়ের গোড়ালি রাখা এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো।
-
২. কাতারের মধ্যে ফাঁক রেখে দাঁড়ানো: জামাত শুরু হওয়ার পরও যদি কেউ এসে দেখে কাতারের মধ্যে ফাঁকা জায়গা আছে, আর সেখানে সে দাঁড়াতে পারবে, তাহলে তাকে সে জায়গাটুকু পূর্ণ করে দাঁড়াতে হবে। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৩১০)। হাদিস শরিফে এমন ফাঁকা জায়গা রাখতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে, যা শয়তানের প্রবেশের পথ খুলে দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস: ৬৬৬)।
-
৩. সামনের কাতারে জায়গা খালি রেখে পেছনে দাঁড়ানো: জামাতে নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম হলো, প্রথমে সামনের কাতার পূর্ণ করা। এরপর তার পেছনে নতুন কাতার করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা সামনের কাতার আগে সম্পূর্ণরূপে পূরণ করো, তারপর এর পেছনের কাতার (এভাবে পর্যায়ক্রমে কাতারগুলো) পূরণ করো।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭১)।
-
৪. দৌড়ে এসে জামাতে শরিক হওয়া: অনেকে জামাতের সওয়াব অর্জনের তাড়নায় দৌড়ে এসে নামাজে শরিক হন। কিন্তু রাসুল (সা.) এই কাজের ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “নামাজের ইকামত শুনলে তোমরা ধীর ও শান্তভাবে যাও এবং তাড়াহুড়া কোরো না।” (বুখারি, হাদিস: ৬৩৬)।
-
৫. রুকু না পেলে পরবর্তী রাকাতের অপেক্ষা করা: কিছু ব্যক্তি রুকু ধরতে না পারলে জামাতে শরিক না হয়ে এমনিই দাঁড়িয়ে থাকেন, যা ভুল পদ্ধতি। হাদিসের নির্দেশ হলো: “তোমরা ইমামকে যে অবস্থায় পাও নামাজে শরিক হয়ে যাও, আর যতটুকু ছুটে গেছে তা (জামাত শেষে) আদায় করো।” (বুখারি, হাদিস: ৬৩৬)। সুতরাং, ইমামকে যে অবস্থায়ই পাওয়া যাক, নামাজে শরিক হয়ে যেতে হবে।
-
৬. ইমামের আগে রুকু-সিজদা করা: জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার সময় অনেকে ইমামের আগেই রুকু বা সিজদায় চলে যায়, অথবা ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে। ইচ্ছা করে যারা এমন করে, তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তোমাদের কেউ কি এ নিয়ে কোনো ভয় করে না—যখন সে ইমামের আগে তার মাথা উঠিয়ে নেয় তখন আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথায় কিংবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে পাল্টে দিতে পারেন!” (বুখারি, হাদিস: ৬৯১)।
-
৭. সিজদায় হাত বাঁকিয়ে অন্যকে কষ্ট দেওয়া: সিজদার সময় অনেকে হাত এমনভাবে বাঁকিয়ে রাখে, যার ফলে তার পাশে নামাজ আদায়কারীর কষ্ট হয়। এমন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি, কারণ এতে অপরের প্রতি হক নষ্ট হয়।
-
৮. ইমাম সাহেবের কোনো ভুল হলে লোকমা না দেওয়া: মানুষ হিসেবে ইমাম সাহেবের ভুল হতেই পারে। কিছু ভুলের জন্য সাহু সিজদার বিধান রয়েছে। আবার কিছু ভুল এমন, যেখানে ইমাম সাহেবকে তাৎক্ষণিক সতর্ক করে দিতে হয় বা লোকমা দিতে হয়। যেমন—যোহর নামাজের তৃতীয় রাকাতেই ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকের জন্য বসে পড়লেন। তখন তাঁকে লোকমা দিতে হবে। এই লোকমা যে কেউ দিতে পারে, যিনি ভুলটি ধরতে পারবেন। (ফতোয়ায়ে রহীমিয়া: ৬/১৮৮)।
-
৯. ইমাম সাহেব এক সালাম ফেরানোর পরই মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যাওয়া: অনেককেই দেখা যায়, ইমাম সাহেব এক সালাম ফেরানোর পর যখন দ্বিতীয় সালাম শুরু করেন, তখনই মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যায় (অর্থাৎ যার কিছু রাকাত ছুটে গেছে)। অথচ নিয়ম হলো, ইমাম সাহেব ডানে-বাঁয়ে উভয় দিকে সালাম ফেরানো শেষ করার পরও কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়াবে, এর আগে নয়। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৩৪৮)।
-
১০. মোনাজাতকে নামাজের অংশ মনে করা: আমাদের সমাজে প্রায় প্রতিটি মসজিদেই ফরজ নামাজের জামাত শেষে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা হয়। বিশুদ্ধ মত হিসেবে, এভাবে মোনাজাত করাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে, এ মোনাজাত নামাজের কোনো অংশ নয় এবং জামাতেরও অংশ নয়। সালাম ফেরানোর মধ্য দিয়ে নামাজ শেষ হয়ে যায়। ফলে ইমাম যখন মোনাজাত করেন, তখন কেউ সেই মোনাজাতে শরিক হতেও পারেন, নাও হতে পারেন। এটি ঐচ্ছিক বিষয়।
আপনার মতামত লিখুন: