রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সূরা নাহলে আল্লাহর একত্ববাদের গুরুত্ব: শিরক বর্জনের আহ্বান

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২০, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

সূরা নাহলে আল্লাহর একত্ববাদের গুরুত্ব: শিরক বর্জনের আহ্বান

সংগৃহীত

আমাদের ধর্মীয় অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইসলামে আল্লাহর একত্ববাদের ধারণা বা তাওহিদ হলো মূল ভিত্তি। এর অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই; তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তার কোনো শরীক বা সমকক্ষ নেই। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এবং অসংখ্য হাদিসে এই মৌলিক বিশ্বাসকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। সূরা নাহলের ৫১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা তাঁর সাথে আর কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ না করে। এটি শুধুমাত্র একটি নির্দেশনা নয়, বরং মানবজাতির জন্য একটি চূড়ান্ত ঘোষণা যে, তিনিই একমাত্র সত্তা যাকে ভয় করা উচিত এবং যার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা উচিত।

সূরা নাহলের ৫১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন:

وَ قَالَ اللّٰهُ لَا تَتَّخِذُوۡۤا اِلٰـهَیۡنِ اثۡنَیۡنِ ۚ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ فَاِیَّایَ فَارۡهَبُوۡ

"আর আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনি তো কেবল এক ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর।’" (সূরা নাহল, আয়াত: ৫১)

এই আয়াতটি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে, ভালো-মন্দ সবকিছুর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতেই নিহিত। তিনি ছাড়া আর কেউই কারো ভালো বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। আমাদের গভীর বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনে শিরক বা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করার প্রবণতা থেকে রক্ষা করা। শিরক শুধু একটি ধর্মীয় অপরাধ নয়, এটি মানুষের চিন্তা, বিশ্বাস এবং কর্মের মধ্যে গভীর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করলে দেখা যায়, মানব ইতিহাসে বহু জাতি ও সভ্যতা একাধিক উপাস্যে বিশ্বাস স্থাপন করে এসেছে। কোরআনের সূরা আল-আম্বিয়ার ২২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন: "যদি এতদুভয়ে

আল্লাহ ছাড়া আরও অনেক ইলাহ থাকত তাহলে তা ধ্বংস হয়ে যেত।" এই আয়াতটি মহাবিশ্বের শৃঙ্খলা এবং নিখুঁত পরিচালনার দিকে ইঙ্গিত করে, যা একজন একক, পরাক্রমশালী সত্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। যদি একাধিক ইলাহ থাকত, তবে তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং ভিন্ন ভিন্ন ইচ্ছার কারণে মহাবিশ্বের এই সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ত। এটি কেবল সৃষ্টিজগতের জন্যই নয়, মানব সমাজের জন্যও প্রযোজ্য। একাধিক উপাস্য মানুষের মধ্যে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।


ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সারা জীবন এই একত্ববাদের শিক্ষাকে প্রচার করেছেন। সহীহ বুখারীর একটি হাদিসে তিনি বলেছেন:


"যে সাক্ষ্য দিল, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল। আর নিশ্চয় ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল এবং সে কালেমা যা তিনি মারইয়ামকে পৌছিয়েছেন ও তার পক্ষ থেকে একটি রূহ মাত্র। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, তার আমল যাই হোক, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।" (বুখারী, হাদিস: ৩৪৩৫)

এই হাদিসটি একত্ববাদের চূড়ান্ত সারসংক্ষেপ তুলে ধরে এবং বিশ্বাসীদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করে। এটি স্পষ্ট করে যে, আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস এবং তাঁর প্রেরিত রাসূলদের প্রতি ঈমানই মুসলিম জীবনের মূল ভিত্তি।

পরিশেষে, সূরা নাহলের ৫১ নম্বর আয়াত এবং এর প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আয়াত ও হাদিস আল্লাহর একত্ববাদের গভীর তাৎপর্যকে তুলে ধরে। এটি কেবল ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং এটি একটি জীবন দর্শন যা মানুষকে সকল প্রকার শিরক ও অংশীদারিত্ব থেকে মুক্ত করে একটি সরল, সুসংহত এবং আল্লাহর উপর নির্ভরশীল জীবনযাপনে উৎসাহিত করে। আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস মানুষকে মানসিক শান্তি, স্থিরতা এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করে, যা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য অপরিহার্য।