জুলাই ২৩, ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, হযরত ঈসা (আ.) (যিশু) কে বনী ইসরাঈল জাতির প্রতি নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল। তাঁর প্রধান আহ্বান ছিল এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁরই আনুগত্য মেনে চলা। তবে, বনী ইসরাঈল জাতির একটি অংশ হযরত মুসা (আ.)-এর মতো ঈসা (আ.)-এরও বিরোধিতা করেছিল এবং তাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। পবিত্র কুরআনে ঈসা (আ.)-এর এই দাওয়াত এবং তাঁর পরবর্তী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের সুসংবাদ দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের সূরা সফ-এর ৬ষ্ঠ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:
وَ اِذۡ قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اِنِّیۡ رَسُوۡلُ اللّٰهِ اِلَیۡكُمۡ مُّصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیَّ مِنَ التَّوۡرٰۃِ وَ مُبَشِّرًۢا بِرَسُوۡلٍ یَّاۡتِیۡ مِنۡۢ بَعۡدِی اسۡمُهٗۤ اَحۡمَدُ ؕ فَلَمَّا جَآءَهُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ قَالُوۡا هٰذَا سِحۡرٌ مُّبِی
"আর যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাঈল, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’। অতঃপর সে যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বলল, ‘এটাতো স্পষ্ট যাদু’।"
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ঈসা (আ.) তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে নিজেকে আল্লাহর বার্তাবাহক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর আগমন ছিল পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব তাওরাতের সত্যায়নকারী হিসেবে। তিনি এমন কোনো নতুন ধর্ম বা আইন নিয়ে আসেননি যা তাওরাতের মূল শিক্ষা থেকে ভিন্ন ছিল। বরং, তিনি তাওরাতের মৌলিক বার্তা—এক আল্লাহর ইবাদত এবং সৎ জীবনযাপনের প্রতিই গুরুত্বারোপ করেছিলেন।
ঈসা (আ.) তাঁর দাওয়াতের মাধ্যমে বনী ইসরাঈলকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি যে শিক্ষা দিচ্ছেন, তা তাওরাতেরই ধারাবাহিকতা। এর মাধ্যমে তিনি মুসা (আ.), হারূন (আ.), দাউদ (আ.) এবং সুলাইমান (আ.)-সহ অন্যান্য নবীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, তিনি তাওরাতের বিরোধিতা করছেন না, বরং তাকে সমর্থন করছেন এবং তার সত্যতাকে প্রমাণ করছেন। এই বিষয়টির মাধ্যমে তিনি পূর্ববর্তী সকল নবীদের একত্বের ধারণা তুলে ধরেছিলেন, যেখানে সকল আসমানী কিতাব ও নবীদের মূল বার্তা ছিল অভিন্ন—একত্ববাদ।
এছাড়াও, ঈসা (আ.) তাঁর দাওয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তাঁর পরে আগমনকারী শেষ নবী, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুসংবাদ দিয়েছিলেন। কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সেই নবীর নাম হবে 'আহমদ', যা মুহাম্মদ (সা.)-এর অপর নাম। এটি প্রমাণ করে যে, পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাব ও নবীদের আগমনের ধারা শেষ হয়েছে মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে, এবং তিনি মানবজাতির জন্য সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বার্তাবাহক। তবে, ঈসা (আ.) যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে তাদের কাছে আগমন করলেন, তখন বনী ইসরাঈলের একটি অংশ তাঁকে যাদুকারী বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল, যা তাদের অবাধ্যতা ও সত্য প্রত্যাখ্যানের প্রবণতাকে তুলে ধরে।
আপনার মতামত লিখুন: