আগস্ট ১, ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের নারীসমাজের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে যা একজন মায়ের চোখে দেখা দরকার। তারেক রহমান বিশেষ করে নারীসমাজকে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ এবং চরমপন্থা যাতে আর কোনোদিন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
'ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীর অবদান' শীর্ষক এই আলোচনা সভাটি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমান দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের উদ্দেশে বলেন, নারী-পুরুষ-শিশু, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার জন্য শহীদদের কাঙ্ক্ষিত একটি ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি দৃঢ়ভাবে আশা করেন, সবার জন্য একটি নিরাপদ, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান অভিযাত্রায় অতীতের মতো আগামী দিনেও দেশের মা-বোনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
তারেক রহমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও স্বজনহারা অসংখ্য মা-বোনের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, "বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। আমার মা-ও (বেগম খালেদা জিয়া) তাঁর এক সন্তানকে (আরাফাত রহমান কোকো) হারিয়েছেন আপনাদেরই মতো।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদ অবসানের পর একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ এসেছে, যেখানে আগামী দিনে নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তারেক রহমান একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা কমপক্ষে ৫০ লাখ প্রান্তিক পরিবারের জন্য 'ফ্যামিলি কার্ড' চালু করা হবে। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পরিবারের নারীপ্রধানের নামে এই ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করা হবে। এর লক্ষ্য হলো, প্রান্তিক পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক অথবা প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা প্রদান করা, যা একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটাবে এবং অপরদিকে পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করবে।
তারেক রহমান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নারী উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের অর্ধেকসংখ্যক নারীকে রাষ্ট্র ও রাজনীতির মূলধারার বাইরে রেখে কখনোই একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। নারীশক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে বিএনপি সব কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে। তিনি আরও বলেন, নারীদের জন্য শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসার দ্বার উন্মুক্ত করা এবং তাদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা নারীর প্রতি বৈষম্য ও পারিবারিক সহিংসতা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই বিএনপির স্লোগান হলো ‘ক্ষমতায়িত নারী শক্তি, পরিবারের মুক্তি’।
এই আলোচনা সভায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা মেডেল প্রদান এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদানের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সভাটি সঞ্চালনা করেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান।