জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
পৃথিবীর সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত নরওয়ের সভালবার্ড দ্বীপপুঞ্জ এক রহস্যময় ও অনন্য স্থান, যা তার অদ্ভুত আইন, কঠোর জলবায়ু এবং বৈশ্বিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত।
সভালবার্ড: আর্কটিকের দ্বীপপুঞ্জ
-
অবস্থান: এটি পৃথিবীর চরম উত্তরে, আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত।
-
প্রবেশাধিকার: এটি নরওয়ের একটি দ্বীপ যেখানে বিশ্বের কোনো নাগরিকের প্রবেশে ভিসার প্রয়োজন হয় না এবং যে কেউ এখানে কাজ করতে পারে। তবে, সভালবার্ডে পৌঁছানোর জন্য নরওয়ে হয়ে যেতে হয়, যার জন্য শেঙ্গেন ভিসা প্রয়োজন।
-
অনন্য আইন:
-
এই দ্বীপে জন্ম নেওয়া বা মারা যাওয়া নিষিদ্ধ।
-
যদি কেউ খুব অসুস্থ বা খুব বৃদ্ধ হয়ে যায়, তবে তাকে দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে হয়।
-
দ্বীপে হাসপাতালগুলোতে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা নেই, তাই গর্ভবতী মহিলাদের প্রসবের প্রায় এক মাস আগে নরওয়ের ট্রোমসো শহরে পাঠানো হয়।
-
দ্বীপে মারা যাওয়া নিষিদ্ধ কারণ এখানকার পারমাফ্রস্ট (স্থায়ীভাবে বরফাবৃত মাটি) মৃতদেহ পচতে বাধা দেয়।
-
-
জলবায়ু: এখানে দীর্ঘ মাস ধরে সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে, যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে সূর্য ওঠে না।
-
বন্যপ্রাণী: এখানে মেরু ভাল্লুক রয়েছে, তবে পেঙ্গুইন নেই। এর বিপরীতে, দক্ষিণ মেরুতে পেঙ্গুইন থাকলেও মেরু ভাল্লুক নেই।
-
শাসনব্যবস্থা: এই দ্বীপপুঞ্জ নরওয়ের কোনো প্রদেশের অংশ নয়, বরং এটি একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল যা নরওয়েজিয়ান সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন গভর্নর দ্বারা পরিচালিত হয়।
-
জনসংখ্যা ও অবকাঠামো:
-
প্রধান শহর লংইয়ারবিয়েনে মাত্র দুটি রাস্তা এবং ২০০০ জন মানুষ বসবাস করে।
-
এখানে একটি সুপারমার্কেট, একটি ক্যাফে এবং দুটি বা তিনটি রেস্তোরাঁ রয়েছে।
-
পুরো সরকার একটি মাত্র ভবন থেকে পরিচালিত হয়।
-
-
নিরাপত্তা: মেরু ভাল্লুকের উপস্থিতির কারণে এটি বিপজ্জনক স্থান, এবং মানুষ আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র বহন করে।
-
অর্থনীতি: এখানে মানুষের বসবাসের প্রধান কারণ হলো কয়লা খনন। সোভিয়েত আমলের একটি রাশিয়ান ভূতুড়ে শহর ছিল এবং বর্তমানে একটি মাত্র কয়লা খনি অবশিষ্ট আছে, যা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, ফলে শহরটি কেবল পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।
-
গ্লোবাল সিড ভল্ট (ডুমসডে ভল্ট):
-
সভালবার্ডে অবস্থিত এই ভল্টে উত্তর কোরিয়াসহ বিশ্বের সকল দেশের বীজ সংরক্ষণ করা হয়।
-
এটি একটি ভূগর্ভস্থ গুহা যার তাপমাত্রা -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
-
২০১৫ সালে, সিরিয়ার আলেপ্পোতে একটি বীজ ব্যাংক থেকে বীজ হারিয়ে যাওয়ার পর এই ভল্টটি খোলা হয়েছিল সিরিয়ার বীজ পুনরুদ্ধার করার জন্য।
-
২০১৭ সালে, এই বীজগুলোর কিছু লেবানন ও মরক্কোতে রোপণ করা হয়েছিল এবং বাকিগুলো পুনরায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
-
-
দৈনন্দিন জীবন: এখানকার বাসিন্দারা প্রায়শই বিচ্ছিন্ন বোধ করেন তবে একে অপরের প্রতি যত্নশীল। পরিবেশের কারণে কিছু মানুষ বিনা কারণে বিষণ্ণতা অনুভব করে।
-
কর্মসংস্থান: সভালবার্ডে কর্মরত একজন ব্যক্তির গড় বেতন ৩০,০০০ নরওয়েজিয়ান ক্রোন।
নরওয়ে (সাধারণ তথ্য)
-
রাজধানী: অসলো।
-
অর্থনীতি:
-
এটি ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ।
-
বিশ্বব্যাপী তৃতীয় সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় রয়েছে।
-
উচ্চ জীবনযাত্রার মানের জন্য পরিচিত।
-
প্রধান শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে তেল ও গ্যাস (রাশিয়ার পর ইউরোপে সবচেয়ে বেশি গ্যাস রয়েছে), জাহাজ নির্মাণ, কাগজ পণ্য, ধাতু, রাসায়নিক, কাঠ, বস্ত্র এবং মাছ ধরা।
-
নরওয়ের বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সার্বভৌম সম্পদ তহবিল রয়েছে, যা তেল ও গ্যাস রাজস্ব বিনিয়োগ করে।
-
নরওয়েতে তেল আবিষ্কারের কৃতিত্ব একজন ইরাকি ব্যক্তিকে দেওয়া হয়, যার জন্য নরওয়েজিয়ান জনগণ কৃতজ্ঞ।
-
-
শহর:
-
অসলো: রাজধানী।
-
ট্রোমসো: নরওয়ের সুদূর উত্তরে অবস্থিত, এটি "উত্তরের প্যারিস" নামে পরিচিত এবং নরওয়ের সবচেয়ে সুন্দর শহর হিসেবে বিবেচিত।
-
আপনার মতামত লিখুন: