জুলাই ২১, ২০২৫, ১০:৪৪ এএম
ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর খাবারে বিষক্রিয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও তার দপ্তর থেকে পানিশূন্যতা ও অন্ত্রে প্রদাহের কথা বলা হচ্ছে, বিশ্লেষকরা এই অসুস্থতাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে এই ঘটনা নতুন করে ভূ-রাজনৈতিক জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত এই ঘটনাকে শুধু একটি শারীরিক অসুস্থতা হিসেবে দেখছেন না।
নেতানিয়াহুর দপ্তর জানিয়েছে, ২০ জুলাই, ২০২৫, রোববার রাতে অসুস্থ বোধ করায় তাকে হাদাসা আইন কেরেম হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ডা. আলোন হার্শকো বাসায় এসে পরীক্ষা করেন। চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে নষ্ট খাবার খাওয়ার কারণে অন্ত্রে প্রদাহ এবং পানিশূন্যতার কথা বলেছেন। তাকে স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আরও জানিয়েছে, আগামী তিন দিন তিনি বাসা থেকেই দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাবেন। এর ফলে সোমবার ও মঙ্গলবার তার দুর্নীতির মামলার শুনানি স্থগিত করা হয়েছে এবং ৫ সেপ্টেম্বরের আগে আর কোনো শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এই ঘটনাটি যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন নেতানিয়াহু নিয়মিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। এটি স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছে। দেশের কমপক্ষে ২০টি ভিন্ন নির্ভরযোগ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল, যেমন প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা, কালবেলা, বিডিনিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, ঢাকা পোস্ট, বাংলা ট্রিবিউন, সময় নিউজ, চ্যানেল আই অনলাইন, নয়া দিগন্ত, ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক, যুগান্তর, সমকাল, বণিক বার্তা, আমাদের সময়, ভোরের কাগজ এবং মানবজমিন, এই খবরটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে। তবে অধিকাংশ পোর্টাল শুধু সরকারি বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ বলছে, নেতানিয়াহুর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার এমন আকস্মিক অসুস্থতা, বিশেষ করে যখন ইসরায়েল গাজা যুদ্ধে জড়িয়ে আছে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে, তখন এর পেছনের কারণ নিয়ে আরও গভীর অনুসন্ধানের প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, নেতানিয়াহু ৭৫ বছর বয়সে একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন। ২০২৩ সালে তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়, একই বছর পানিশূন্যতা নিয়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের মার্চে হার্নিয়া এবং ডিসেম্বরে প্রস্টেট অপসারণের অস্ত্রোপচার হয়। একই বছর মার্চ মাসে তিনি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েও কয়েক দিন কাজ থেকে বিরত ছিলেন। তার স্বাস্থ্যগত ইতিহাস বিবেচনা করলে, বর্তমান অসুস্থতা নতুন নয়। তবে, এবারের 'খাবারে বিষক্রিয়া'র বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে, যেখানে নেতানিয়াহুর কঠোর নীতি বিতর্কিত, সেখানে এমন খবর কূটনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
নেতানিয়াহুর অসুস্থতা ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলছে। তার দুর্নীতির মামলার শুনানি স্থগিত হওয়ায় এটি তাকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক চাপ কমবে না। চলমান গাজা যুদ্ধ এবং হামাসের সঙ্গে জিম্মি মুক্তি চুক্তির অনিশ্চয়তা ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। এমন সময় প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা সামরিক ও নিরাপত্তা মহলে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সূত্রের খবর, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নেতানিয়াহুর অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যদিও কোনো নির্দিষ্ট ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এই ঘটনাকে নেতানিয়াহুর ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ এবং ইসরায়েলের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে দেখছে।
আপনার মতামত লিখুন: