সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

আবার বনে ফিরবে পাঁচ মহাবিপন্ন উদ্ভিদআবার বনে ফিরবে পাঁচ মহাবিপন্ন উদ্ভিদ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০১:১৮ পিএম

আবার বনে ফিরবে পাঁচ মহাবিপন্ন উদ্ভিদআবার বনে ফিরবে পাঁচ মহাবিপন্ন উদ্ভিদ

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের বন থেকে হারিয়ে যেতে বসা পাঁচটি মহাবিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতিকে আবার তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক গাজী মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক ও সংরক্ষণবিদ এই কাজে নিয়োজিত আছেন।

সুন্দরবনের দুটি অর্কিড: গবেষকদের অনুসন্ধানে সুন্দরবনে দুটি মহাবিপন্ন অর্কিড প্রজাতি, ছোট বাল্ব অর্কিডবাল্বোরক্স, এর সন্ধান মিলেছে। ছোট বাল্ব অর্কিড বর্তমানে শুধু সুন্দরবনের সুপতি ও হরিণটানা খালে টিকে আছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। অন্যদিকে, বাল্বোরক্স অর্কিড চাঁদপাই ও শরণখোলা এলাকার কয়েকটি খালে একেবারে সীমিত সংখ্যায় পাওয়া যায়। আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রকাশিত লাল তালিকায় এই অর্কিড দুটিকে 'মহাবিপন্ন' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই অর্কিড দুটিকে সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবন থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামে আনা হয়েছে। সেখানে তাদের বংশবৃদ্ধির উদ্যোগ শুরু হয়েছে এবং গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই অর্কিডগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পর আবার সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

তিনটি মহাবিপন্ন বৃক্ষ প্রজাতি: এই দুটি অর্কিড ছাড়াও দেশের আরও তিনটি মহাবিপন্ন বৃক্ষ প্রজাতিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে:

১. বন খেজুর: এটি খেজুরগাছের একটি বিরল প্রজাতি, যা বর্তমানে শুধু দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর শালবনেই টিকে আছে, এবং সংখ্যায় ২০০-এর নিচে। ছোট আকারের এই গাছটি পামজাতীয় উদ্ভিদের মতো এবং ফুলের টবেও জন্মানোর উপযোগী। এর বীজ সংগ্রহ করে দিনাজপুরের বন বিভাগের নার্সারিতে বংশবৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং একটি গাছ ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনে আনা হয়েছে। সফলভাবে বংশবৃদ্ধির পর এগুলো আবার দিনাজপুরের শালবনগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

২. চালমুগড়া: একসময় বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাঙামাটির বনে দেখা গেলেও এটি এখন অত্যন্ত বিরল হয়ে গেছে। এই উদ্ভিদ বীজের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে, তবে এর বীজ উচ্চ বা স্বল্প কোনো তাপমাত্রাই সহ্য করতে পারে না, যা এর বংশবৃদ্ধিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

৩. বাঁশপাতা: এই গাছটি একসময় বাণিজ্যিকভাবে পেন্সিল তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো। দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে এটি দেখা গেলেও এর প্রকৃত সংখ্যা বর্তমানে এক শর কাছাকাছি।চালমুগড়া ও বাঁশপাতা – এই দুটি প্রজাতির বৃক্ষই বর্তমানে ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনে আছে এবং সেখানে তাদের বংশবৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে।

অধ্যাপক গাজী মোশারফ হোসেনের মতে, বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার বৃক্ষ প্রজাতির মধ্যে বন খেজুর, চালমুগড়া ও বাঁশপাতা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। অন্যদিকে ১৯০ প্রজাতির অর্কিডের মধ্যে ছোট বাল্ব অর্কিড ও বাল্বোরক্স মহাবিপন্ন। এই পাঁচটি উদ্ভিদের বনে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ সফল হলে এটি বিরল উদ্ভিদ সংরক্ষণে বাংলাদেশের প্রথম বড় পদক্ষেপ হবে।