মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে স্বজনদের হাহাকার,

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে স্বজনদের হাহাকার,

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট যেন এক মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সোমবার বিকেলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালটির সামনে স্বজনদের আহাজারি আর উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভিড় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই অনিয়ন্ত্রিত ভিড় জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে বাধ্য করছে চিকিৎসকদের, যা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই মানবিক সংকটের চিত্র এবং এর পেছনের কারণ।

 

 

সোমবার (২১ জুলাই, ২০২৫) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আমাদের প্রতিবেদক জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে গিয়ে দেখেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে একের পর এক দগ্ধদের নিয়ে আসা হচ্ছে। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের দ্রুত ওয়ার্ডে পাঠানো হলেও, সেখানেও স্বজন ও উৎসুক জনতার ভিড় এতটাই বেশি যে চিকিৎসকদের সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এই ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের আহতদের কাছে পৌঁছাতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বার্ন ইনস্টিটিউটের মতো একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে যেখানে নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা সবচেয়ে জরুরি, সেখানে এই অনিয়ন্ত্রিত ভিড় সেবার মানকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

 

দুর্ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল দগ্ধদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন। এছাড়াও, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানও আহতদের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে উপস্থিত হন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এই আগমন একদিকে যেমন সরকারি তদারকি এবং রাজনৈতিক সংহতি প্রকাশ করে, তেমনি ভিড় আরও বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে পুলিশ, র‍্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যাম্বুলেন্সের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। তবে উৎসুক জনতার সংখ্যা এতটাই বেশি যে তাদের সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

 

সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং ১২ মিনিট পরই বিধ্বস্ত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল জানিয়েছেন, এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে বেশিরভাগই কোমলমতি শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে, যা এই দুর্ঘটনার বেদনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ও বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিচ্ছেন।

 

 

এই ধরনের জাতীয় দুর্যোগের সময় স্বজনদের উদ্বেগ স্বাভাবিক, তবে উৎসুক জনতার অনিয়ন্ত্রিত ভিড় প্রায়শই উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বার্ন ইনস্টিটিউটের মতো স্পর্শকাতর স্থানে যেখানে জরুরি সেবা প্রদানই প্রধান লক্ষ্য, সেখানে এই ধরনের ভিড় চিকিৎসকদের মনোযোগ বিঘ্নিত করে এবং মূল্যবান সময় নষ্ট করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে অযথা ভিড় কমানো যায় এবং কেবল জরুরি প্রয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই ঘটনাস্থলে বা হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দায়িত্বশীল আচরণের গুরুত্ব এই ধরনের মানবিক সংকটে অপরিহার্য।
 

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে স্বজনদের হাহাকার আর উৎসুক জনতার ভিড় বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার এক জটিল চিত্র তুলে ধরছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসকদের নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া। এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কেবল উদ্ধার তৎপরতা নয়, বরং দুর্ঘটনার পরবর্তী মানবিক সংকট মোকাবিলায় জনসচেতনতা এবং সুসংগঠিত পদক্ষেপ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা যায়, এই শোক থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে আরও কার্যকর জননিয়ন্ত্রণ ও সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।