মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

বিমান বিধ্বস্ত: নিহত পাইলট তৌকিরের স্বজনদের শোকাহত অবস্থায় রাজশাহী থেকে ঢাকায় নেওয়া হলো

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম

বিমান বিধ্বস্ত: নিহত পাইলট তৌকিরের স্বজনদের শোকাহত অবস্থায় রাজশাহী থেকে ঢাকায় নেওয়া হলো

ছবি- সংগৃহীত

রাজশাহী মহানগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাড়িতে তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন এবং ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন ভাড়া থাকেন। স্থানীয়দের মতে, তৌকির পরিবারটি অত্যন্ত মিশুক এবং তৌকির নিজেই ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী তরুণ। প্রায় ২৫ বছর ধরে এই পরিবার রাজশাহীতে বসবাস করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি গ্রামে তাদের পৈতৃক নিবাস হলেও, তৌকিরের পরিবার সর্বশেষ 'আশ্রয়' নামের বাড়িটির তিনতলায় উঠেছিলেন।

ঘটনার পরপরই নিহত পাইলটের মামা রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, বিকেল ৫টার দিকে র‍্যাবের একটি গাড়িতে করে তৌকিরের বাবা-মা, বোন সৃষ্টি খাতুন, বড় বোন বৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম এবং আরেক মামা মোহাম্মদ আলীকে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর থেকে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনীর পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, নিহত তৌকির ইসলাম সাগরের স্ত্রী ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেন এবং তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার। প্রায় এক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তৌকিরের মামা রফিকুল ইসলাম চোখ মুছতে মুছতে বলেন, "এ রকম ভালো ছেলে আমি আর দেখিনি। তার মতো পরিশ্রমী, ভদ্র, মেধাবী ছেলেকে এভাবে হারিয়ে ফেলব ভাবতেই পারিনি।" তার এই কথাগুলো তৌকিরের ব্যক্তিগত গুণের প্রতিফলন ঘটায়।

তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা হলেও দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রাজশাহীতেই বসবাস করছেন। পেশায় তিনি একজন আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী। তৌকিরের শিক্ষাজীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি রাজশাহীর গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং ওই কলেজের ৩৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন, যা তার দেশ সেবার প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ।

তৌকিরের মৃত্যুর খবর শুনে পাবনা ক্যাডেট কলেজে তার সাবেক প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদও তার বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, "তৌকির খুবই মেধাবী, ভীষণ ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। সে ছোটদের স্নেহ করত, বড়দের সম্মান দিত। ওর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।"

একটি মর্মান্তিক বিষয় হলো, গত বছর থেকে রাজশাহীর সপুরায় নিজস্ব জমিতে তিনতলা একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন তৌকির ইসলাম সাগর। সেই বাড়িটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। নিজের হাতে গড়া সেই বাড়িতে আর উঠা হলো না তার, যা তার অকালমৃত্যুর এক হৃদয়বিদারক স্মারক হয়ে থাকবে। এই ঘটনা বিমান দুর্ঘটনায় শুধু বৈমানিকের জীবনহানি নয়, বরং একটি পরিবারের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যৎকেও কীভাবে তছনছ করে দেয়, তার এক করুন উদাহরণ।